কোষ্ঠকাঠিন্য কি? কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায়

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায়
কোষ্ঠ্যকাঠিন্য দূর করার উপায় সম্পর্কে জানুনঃ দৈনন্দিন জীবনের সবথেকে কমন রোগের নাম হচ্ছে কোষ্ঠকাঠিন্য। মলত্যাগের সময় প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করা, মলদ্বার দিয়ে রক্ত পড়াসহ নানা উপসর্গ নিয়ে কোষ্ঠকাঠিন্য রোগের লক্ষণ প্রকাশিত হয়ে থাকে। পরিপাকতন্ত্রের স্বাভাবিক কাজ করার ক্ষমতা যদি মন্থর হয়ে যায় তাহলে এই ধরনের সমস্যার দেখা দিতে পারে। তাই কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় সম্পর্কে জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন।
কোষ্ঠকাঠিন্য কি
সাধারণত পায়খানা শক্ত বা কষা হওয়া, ১-২দিন পর পর মলত্যাগের চাপ হওয়াকেই কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হয়ে থাকে। কোষ্ঠকাঠিন্যের ইংরেজি শব্দ হচ্ছে Constipation। নিয়মিত আঁশজাতীয় খাবার গ্রহণের পরও এই ধরনে সমস্যা দেখা দিতে পারে। মেডিকেলের সায়েন্স এর পরিভাষায় কোন সুস্থ স্বাভাবিক ব্যক্তি সপ্তাহে ২-৩ বার বা এর থেকে কম সময় মলত্যাগ, মলত্যাগের সময় প্রচন্ড চাপ দিতে হয় তাহলে তাকে কোষ্ঠকাঠিন্য বলে অবহিত করা হয়।
অনেক সময় মলত্যাদের পরও পেট পরিষ্কার হয় নি বা মলত্যাগের সাথে রক্ত আসার মত আরও কঠিন সমস্যার দেখা দিতে পারে। তার এই ধরনের সমস্যা যদি দীর্ঘ ৩ মাসের থেকে বেশি সময় ধরে চলতে থাকে তাহলে তাকে দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য বলে।
কোষ্ঠকাঠিন্য রোগের লক্ষণ সমূহ
উপরেরে আলোচনায় কোষ্ঠকাঠিন্য কি সম্পর্কে বিস্তারিত ধারনা দেয়ার চেষ্টা করেছি। কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ একদিনে হয় না। দীর্ঘদিন পায়খান শক্ত বা কষ হওয়া এর প্রধান হলেও এর সাথে আরও কিছু লক্ষণ প্রকাশ পেয়ে থাকে। তাহলে চলুন কোষ্ঠকাঠিন্য রোগের লক্ষণ সমূহ নিয়ে বিস্তারিত জেনে নেইঃ
১। সপ্তাহে ২ থেকে ৩ দিন পর শুকনো মলত্যাগ করা কোষ্ঠকাঠিন্য রোগের প্রধান উপসর্গ।
২। মলত্যাগের সময় প্রচন্ড চাপ প্রয়োগ করতে হয়।
৩। মলত্যাগের পর মলদ্বার ব্যাথা হওয়া।
৪। পায়খানার সাথে রক্ত বের হওয়া।
৫। পায়খানা করার পরও পেট পরিষ্কার না হওয়া।
৬। দীর্ঘ সময় ধরে পায়খানায় বসে থাকা।
৭। পায়খানা করার সময় প্রচন্ড কষ্ট পাওয়া।
৮। দুর্গন্ধযুক্ত গণ গণ বায়ু আসা।
উপরের লক্ষণ সমূহের ২থেকে ৩টি লক্ষণ দেখা দিলে বুঝতে হবে আপনি কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যায় ভোগছেন।
কোষ্ঠকাঠিন্য বা পায়খানা কষা হওয়ার কারণ
কোষ্ঠকাঠিন্য বা পায়খানা কষা হওয়া হওয়ার পেছনে সুনির্দিষ্ট কোন কারণ খুঁজে পাওয়া যায় নি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অপরিকল্পিত ডায়েট, খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। কোন কোন ব্যক্তির ক্ষেত্রে বংশানুক্রমিক কারণে হতে পারে। সঠিক সময়ে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যার সমাধান করতে না পারলে কোলন ক্যান্সারে মত নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।
বিশেষজ্ঞ ডাক্তারা এই সমস্যা হওয়ার পেছনে কিছু কারণ চিহ্নত করেছেন। আপনি যদি কোষ্ঠকাঠিন্য বা পায়খা কষা হওয়ার কারণগুলি জানতে পারেন তাহলে এই সমস্যা থেকে সহজেই মুক্তি পেতে পারবেন। চলুন তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্য বা পায়খানা কষা হওয়ার কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।
১) পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করাঃ পানির অপর নাম জীবন। একজন পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির দৈনিক ২ থেকে ৩ লিটার বা ৬-৭ গ্লাস পানি পান করা উচিত। কিন্তু আমাদের অনেকে ভাত খাওয়ার সময় যতটুকু পরিমাণ পানি পান করতে হয়, ততটুকু পানি পান করে সীমাবদ্ধ থাকেন। এর ফলে শরীরে নানা প্রকার সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন। এই সমস্যাগুলোর অন্যতম সমস্যা হচ্ছে কোষ্ঠকাঠিন্য।অনেক ডাক্তারা কোষ্ঠকাঠিন্য বা পায়খানা কষা হওয়ার কারণ হিসেবে অপর্যাপ্ত পানি পান করাকে দায়ী করেছেন।
২) আঁশজাতীয় বা ফাইবার যুক্ত খাবার কম খেলেঃ আমাদের অনেকে মাছ, মাংস, ডিম ও দুধ না হলে খাবারই খেতে চান না। অথচ তারাই কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যায় ভোগতে থাকা রোগীর তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছেন। খাবারে মধ্যে যদি পরিমিত পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ জাতীয় খাবার না থাকে তাহলে এই ধরনে সমস্যায় পড়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়।

৩) দুগ্ধজাত খাবার অত্যাধিক পরিমাণে খেলেঃ প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় দুগ্ধজাত খাবার থাকা ভাল।কিন্তু এই খাবার যেমনঃ পনির, ছানা, মাখন ও ঘি ইত্যাদি অধিক পরিমাণে খাওয়ার ফলে পায়খানা কষা হওয়ার মত না সমস্যা দেখা দিতে পারেন।
৪) কায়িক পরিশ্রমের অভাবঃ বর্মান সময়ে আমাদের অনেকে কোন প্রকার পরিশ্রম করতে চান না। বিশেষ করে শহুরের ছেলেমেয়েরা কোন প্রকার কায়িক শ্রম করে না। তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। তাই কায়িক শ্রম না করা পায়খানা কষা হওয়ার অন্যতম কারণ হতে পারে।
৫) বিছানায় শুয়ে থাকালেঃ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার কারনে বা এমনিতেই অনেকে বিছানায় শুয়ে বসে থাকতে দেখা যায়। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের তথ্য মতে বিছানায় শুয়ে থাকা কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার কারণ হতে পারে।
৬) মারাত্মক দুশ্চিন্তা বা অবসাদঃ আমাদের অনেকে সব সময় দুশ্চিন্তা বা মানসিক অবসাদ এ ভোগে থাকেন । দেখা যাচ্ছে মানসিক রোগে ভোগতে থাকার কারনে এই ধরনের সমস্যা হতে পারে।
৭) অন্ত্রনালীতে ক্যান্সার কারণেঃ অন্ত্রনালীর ক্যান্সার হলে পেট ব্যথা, পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া সহ কোষ্ঠকাঠিন্য এর মত সমস্যা হতে পারে।
৮) ডায়াবেটিস হলেঃ অধিকাংশ ডায়াবেটিস রোগীর কাছে শোনা যায় যে তাদের পায়খা কষা হয়েছে। পায়খা করার সময় প্রচন্ড বেগ পেতে হয়। যা মূলত কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যার লক্ষণ। তাই বলা যায় কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার পেছনে ডায়াবেটিস দায়ী হতে পারে।
৯) মস্তিষ্কে্র টিউমার এবং রক্তক্ষরণের ফলেঃ সম্প্রতি এক গবেষণার মাধ্যমে প্রমান হয়েছে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার পেছেন মস্তিষ্কের টিউমার এর প্রভাব রয়েছে। তাই মস্তিষ্কের টিউমার এবং রক্তক্ষরণের কারনে এই সমস্যা হতে পারে।
১০) ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ আমাদের অনেককে নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের এ্যান্টিবায়োটিক ঔষুধ গ্রহন করতে দেখা যায়। এ্যান্টিবায়োটিক রোগ সারাতে সাহায্য করলেও, এসব ট্যাবলেট পার্শপ্রতিক্রিয়া হিসেবে নানা রোগের জন্ম দিতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্যের ক্ষেত্রে কোন ব্যতিক্রম নয়। তাই এ্যান্টিবায়োটিকের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জন্যও আপনার এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায়
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের প্রায় ১৫-২০ শতাংশ লোক কোষ্ঠকাঠিন্যের মত জটিল সমস্যায় ভোগতেছেন। সম্প্রতি এক গবেষণার মাধ্যমে দেখা যায় যে এই সমস্যায় ভোগতে থাকা পুরুষের থেকে নারীদের সংখ্যা ২-৩গুন বেশি। যাদের বয়স মূলত ১৮-৪০ বছর তারা এই তালিকার শীর্ষে অবস্থান করছে। তাই সবাই কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায় সম্পর্কে জানতে চায়। চলুন তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তির উপায়গুলি জেনে নেই।
১) পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করাঃ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের মতে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে পানি কম পান করা। তাই আপনি যদি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায় খোঁজে থাকে তাহলে আপনাকে সর্বপ্রথম পানি খাওয়ার পরামর্শ দিব।
শরীরকে সুস্থ রাখতে প্রতিদিন অন্তত ৬ থেকে ৭ গ্লাস পানি পান করতে হবে। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠার সাথে সাথে প্রতিদিন ১ গ্লাস করে পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তুলেন। তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্যসহ নানা জটিল সমস্যা থেকে দূত মুক্তি পেতে পারবেন।
২) খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনঃ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায় হিসেবে খাদ্যভ্যাসের পরিবর্তন করা অত্যন্ত জরুরি।আমরা যারা শুধু মাছ, মাংস পছন্দ করি তাদের এসব খাবারের পাশাপাশি সবজি , আঁশ বা ফাইবার জাতীয় খাবার তালিকায় প্রাধান্য দিতে হবে। যাদের প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় মাছ, মাংসের পাশাপাশি সবজি জাতীয় খাবার রয়েছে তাদের এই সমস্যা নেই বললেই চলে। তাই কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে অব্যশই ফাইবার বা আঁশ জাতীয় খাবার গ্রহণ করা উচিত।
- আরও পড়ুনঃ সেরা ১০টি ত্বক ফর্সা করার ঘরোয়া উপায়
৩) শারীরিক পরিশ্রম করাঃ দৈনন্দিন শারীরিক পরিশ্রম করলে দেহ ও মন ভালো থাকে। পাশাপাশি বিভিন্ন রোগ থেকে দূরে থাকে যায়। যারা নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করে থাকে তাদের দেহে রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। আর দৈহিক পরিশ্রম করলে পেটফাপ ধরা ক্ষুধা মন্দা ইত্যাদি সমস্যা হয় না বললেই চলে। খাবারের প্রতি রুচি বেড়ে যায়। তাই কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায় হিসেবে শারীরিক পরিশ্রম করা অত্যন্ত জরুরি।
৪) দুগ্ধজাত খাবার পরিহার করাঃ রাতের বেলায় আপনারা যারা দুগ্ধ জাতীয় খাবার খেতে পছন্দ করেন তা পরিহার করতে হবে। অনেকের দুগ্ধ জাতীয় খাবার পেট ফাঁপ ধরা, গ্যাসের সমস্যার জন্য দায়ী। তাই কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে হলে দুধ, পনির, ঘি, ছানা খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

৫ ) দুশ্চিন্তা না করাঃ অতিরিক্ত চিন্তাভাবনা শুধু মানসিক রোগেরই সৃষ্টি করে না বরং এটি কোষ্ঠকাঠিন্যের মত জটিল সমস্যা তৈরির জন্য দায়ী। তাই মানসিক রোগের লক্ষণসমূহ প্রকাশ পাওয়ার সাথে সাথে এর চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। যেকোনো সহজ বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তা করা পরিহার করতে হবে। সবসময় নিজেকে হাসিখুশি রাখতে হবে।
দুশ্চিন্তা বা মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তি পেতে বন্ধু-বান্ধবের সাথে সময় কাটানো যেতে পারে।কেননা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায় হিসেবে দুশ্চিন্তা না করা অন্যতম মাধ্যম তাই নিজেকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ রাখতে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত রাখতে হবে।
৬) ঔষধ খাওয়ায় সর্তকতা অবলম্বন করাঃ আমাদের অনেকে নানা সমস্যার জন্য এন্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধ সেবন করে থাকে। কোন এক গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিদিন চার থেকে পাঁচটি ওষুধ খেলে পেট ফাঁপা, গ্যাস, বদহজম ও বমি বমি ভাব সহ নানা জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে।
শুধু এ ধরনের রোগ সৃষ্টি করে না, পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্যের মত কঠিন রোগের ও তৈরি করতে পারে। তাই কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায় হিসেবে বলবো অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে ফেলতে হবে। আর যে সকল ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয় তার বিকল্প ওষুধের ব্যবহার করতে হবে।
৭) ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করাঃ ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ নানা জটিলতা সৃষ্টির পাশাপাশি পায়খানা কষা জন্য দায়ী। দীর্ঘদিন ধরে পায়খানা কষা হলে পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া পায়খানা রাস্তায় ব্যথা,জ্বালাপোড়া করা ও ফোলার সৃষ্টি করে। তাই কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায় খোঁজার শুরুতেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
৮) মস্তিষ্ক রোগের চিকিৎসা করাঃ আমাদের মস্তিষ্কে টিউমার সহ, রক্তক্ষরণ ও নানা ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে। যা পরবর্তীতে কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো নানা জটিল রোগে সৃষ্টি করে থাকে।তাই কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায় হিসেবে মস্তিষ্কে বিভিন্ন রোগ দেখামাত্রই চিকিৎসা করতে হবে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায়
প্রাকৃতিক বা ঘরোয়া উপায়ের মাধ্যমে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা সম্ভব। আপনি যদি কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে চিরতরে মুক্তি পেতে চান তাহলে আপনাকে তা অনুসরণ করতে হবে। তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায় গুলো জেনে নেয়া যাকঃ
১। পায়খানায় বসার সিস্টেমঃ সৃষ্টির প্রথম থেকেই মানুষ squatting পজিশনে বসে মলত্যাগ করে। বর্তমানে যারা আধুনিক কমোডে বসে মলত্যাগ করেন তাদের অন্ত্রের মধ্যে এক ধরনের ভাগ সৃষ্টি হয় এর ফলে মলত্যাগের বাঁধার সৃষ্টি হয়। যার ফলাফল স্বরূপ কোষ্ঠকাঠিন্য বা অশ্ব রোগের সমস্যার সৃষ্টি হয়। তাই কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায় হিসেবে প্যান ব্যবহার করতে হবে।
- আরও পড়ুনঃ মেছতা দূর করার ক্রিম এর নাম ও ব্যবহার
২। শরবত খাওয়াঃ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায় হিসেবে ইসুবগুলের ভুষি এলোভেরা ঊটকমলের ডালের রস দিয়ে শরবত খেতে হবে। নিয়মিত এই প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে শরবত খেলে পায়খানা নরম ও ক্লিয়ার হয়ে যাবে।
৩। কলমি শাক খাওয়াঃ কলমি শাক কোষ্ঠকাঠিন্যসহ পায়খানা কষা প্রতিরোধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আপনারা যারা দীর্ঘদিন এই সমস্যায় ভুগতেছেন তারা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায় হিসেবে কলমি শাক খেতে পারেন।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঔষধ
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায় হিসেবে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারা বিভিন্ন ধরনের ওষুধের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আপনারা যারা কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে চিরতরে মুক্তি পেতে চান অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঔষুধ হিসেবে sachet Movico l খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এই ওষুধটি দিনে ৩বার করে খেতে হবে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য ৫থেকে ১০দিন একটানা খেতে হবে। আপনি যদি কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে চান এই ঔষুধের সম্পূর্ণ ডোজ সম্পন্ন করতে হবে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ট্যাবলেট হিসেবে Dulux 5mg ঔষুধ খেতে পারেন। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঔষধ এর ব্যবহার হিসেবে দিনে ২ বার করে ১ টি ট্যাবলেট খেতে।যেকোনো ধরনের সমস্যার সমাধানে নিজে থেকে কোন ঔষধ না খাওয়াই উত্তম।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার সিরাপের নাম
আপনারা যারা ঘন্টার পর ঘন্টা পায়খায় বসে থাকার পরও পেট ক্লিয়ার করতে পারছেন না। তাদের এই সমস্যার সাময়িক সমাধানের জন্য বাজারের ঔষুধের দোকানে বিভিন্ন ধরনের সিরাপ পাওয়া যায়। যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার সিরাপ নামে পরিচিত। এই ধরনের সিরাপ ব্যবহারে সাময়িক সময়ের জন্য মুক্তি পাওয়া যায়। আপনারা যারা দীর্ঘদিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্যের মত জটিল সমস্যা ভুগছেন এই সিরাপ খাওয়ার মাধ্যমে সমাধান পেতে পারবেন।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার সিরাপের নাম হচ্ছে Avolac ও milk of magnesia।
- Avolacঃ কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে Avolac সিরাপটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এর প্রস্তুতকারক হচ্ছে ARISTOPHARMA যা বাংলাদেশের অন্যতম স্বনামধন্য ওষুধ কোম্পানি। Avolac 100 ওরাল সলিউশন দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্যের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। সিরাপটি অন্ত্রে জল টেনে আপনার মলকে সহজ করে তোলে। কোষ্ঠ্যকাঠিন্য দূর করার উপায় হিসেবে সিরাপটি ব্যবহার করতে পারেন।

- milk of magnesiaঃ আপনারা যারা দীর্ঘ দিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্যের মত জটিল সমস্যার সমাধান করতে ব্যর্থ হচ্ছেন তাদের জন্য সাজেশন হচ্ছে milk of magnesia খাওয়ার। এই সিরাপটি প্রাপ্ত বয়স্কের পাশাপাশি শিশুদের জন্য প্রযোজ্য। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি ২ চামচ করে দিনে ৩ বার খেলে সকল প্রকার কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাবেন। তবে শিশুদের বয়সভেদে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধটি খেতে হবে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ব্যায়াম
স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। সুস্থ দেহে সুন্দর মন বিরাজ করে।মন ও দেহকে সুন্দর রাখতে ব্যায়ামের বিকল্প কিছু হতে পারে না। বিশেষ করে যে সকল মানুষ কোষ্ঠকাঠিন্য নামক জটিল সমস্যায় ভোগতেছেন তাদের ব্যয়াম করা অত্যন্ত জরুরি। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ব্যায়াম হিসেবে যোগাসনের অবদান অপরিসীম।

ব্যায়াম করার মাধ্যমে দেহ থেকে অতিরিক্ত ঘাম, মেদ, চর্বি দূর হয়ে যায়। বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কার্যক্রম সুন্দরভাবে পরিচালিত হয়। আপনারা যারা কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যা নিয়ে চিন্তিত রয়েছেন, যোগাসনের মাধ্যমে তার সমস্যার সমাধান করতে পারবেন। যোগাসন শুধু কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা থেকে মুক্তি দেয় না বরং যোগাসনের মাধ্যমে উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, পায়ের ব্যাথা ও হাঁটুর ব্যাথা মত সকল সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায় নিয়ে শেষকথাঃ
কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদের কিছু বিধি নিষেধ মেনে চলতে হবে। কোষ্ঠকাঠিন্য রোগটি এক দিনে তৈরি হয় নি। তাই এই সমস্যা দূর করাও এক দিনে সম্ভব নয়। নিয়মিত খাদ্যাভাস ও জীবনধারার পরিবর্তনের মাধ্যমেই কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায় হতে পারে। প্রতিদিন মাছ-মাংসের পাশাপাশি লাল শাক কলমি শাক ফাইবার বা আশ জাতীয় খাবার খেতে হবে।
যাদের অতিরিক্ত কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রবলেম রয়েছে গরুর মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। আপনি যদি সঠিক সময়ে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে না পারেন তাহলে কোলন ক্যান্সারের মতো জটিল রোগের সৃষ্টি হতে পারে। তাই কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায় হিসেবে সর্বপ্রথম ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।