রেজিস্ট্যান্স কাকে বলে? রেজিস্ট্যান্স কত প্রকার ও কি কি এবং এর সূত্র

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা! আজকের এই ফিচার পোষ্টিতে রেজিস্ট্যান্স কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি এবং এর সূত্র সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করি, আগত পদার্থ বিজ্ঞান পরীক্ষায় এই প্রশ্নের উত্তরটি সঠিকভাবে দিতে পারবে।
রেজিস্ট্যান্স কাকে বলে
ইলেকট্রনিক্সে রেজিস্ট্যান্স খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এমন কোন ইলেকট্রনিক্স সার্কিট নেই যেখানে রেজিস্ট্রর ব্যবহার করা হয় না। এটি পদার্থবিজ্ঞান কিংবা ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিরিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাছে খুবই পরিচিত শব্দ। তো প্রশ্ন হচ্ছেঃ রেজিস্ট্যান্স কাকে বলে?

রেজিস্ট্যান্স বা Resistance একটি ইংরেজি শব্দ যার অর্থ হচ্ছে বাধা প্রদানকারী। Resistance হচ্ছে পরিবাহী পদার্থের এমন একটি বৈশিষ্ট্য বা ধর্ম যা পরিবাহীর মধ্য দিয়ে Current বা তড়িৎ চলাচলে বাধা প্রদান করে। পরিবাহীর এই বৈশিষ্ট্য বা ধর্মকে রেজিস্ট্যান্স বলে। Resistance এর একক হচ্ছে Ohm (Ω)।সাধারণত রেজিস্ট্যান্স বা রোধকে R দিয়ে প্রকাশ করা হয়।
রেজিস্ট্যান্স এর প্রকারভেদ
কোন প্রবাহীর মধ্য দিয়ে ইলেকট্রনের প্রবাহকে তড়িৎ প্রবাহ হয়। সাধারণত ইলেকট্রন নিন্ম বিভবের অঞ্চল থেকে উচ্চ বিভবের অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়। অনেক সময় ইলেকট্রনের চলার পথে অনু পরমাণুর মধ্যে বাধার সৃষ্টি হয়। ইলেকট্রনের এই বাধাকেই রোধ বলা হয়ে থাকে। ওহমে সূত্র অনুসারে, স্থির তাপমাত্রায় R= V/I
এখানে, R= পরিবাহীর রোধ (Ohm )
V= পরবাহীর দুই প্রান্তের বিভব পার্থক্য(volt)
I= তড়িৎ প্রবাহ(Ampere)
বর্তনীতে মূলত ২ ধরণের রোধ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেমনঃ
১। স্থির রোধ
২। পরিবর্তনশীল রোধ
১) স্থির রোধঃ বর্তনীতে যে সকল রোধের মান নির্দিষ্ট থাকে অর্থাৎ এর মানের পরিবর্তন করা যায় না সেই সকল রোধকে স্থির রোধ বলে।
২) পরিবর্তনশীল রোধঃ বর্তনীতে যে সকল রোধের মান প্রয়োজন অনুসারে পরিবর্তন করা যায় সেই সকল রোধকে পরিবর্তনশীল রোধ বলে। সাধারণত রেডিও, ক্যাসেট, অ্যামপ্লিফায়ার, ফ্যানের রেগুলেটরে এই ধরণের রোধ ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
রোধের সূত্র
ওহমের সূত্র থেকে রোধ সম্পর্কে জানতে পেরিছি। কিন্তু কোন পরিবাহীর রোধ তার উপাদান, তাপমাত্রা এবং আকার- আকৃতির উপর নির্ভর করে। বর্তনীর তাপমাত্রা ও উপদান যদি অপরিবর্তিত থাকে তাহলে রোধের দুটি সূত্র প্রয়োজ্য হয়। এক্ষেত্রে, রোধের সূত্র দুটি হচ্ছেঃ
ক) দৈর্ঘ্যের সূত্রঃ কোন পরিবাহীর তাপমাত্রা ও প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল অপরিবর্তিত থাকলে ঐ পরিবাহীর রোধ তার দৈর্ঘ্যের সমানুপাতিক। পরিবাহীর রোধ R এবং দৈর্ঘ্য L হলে, R ∝ L । অর্থাৎ, স্থির তাপমাত্রা ও প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল অপরিবর্তিত থাকলে কোনো পরিবাহীর দৈর্ঘ্য বৃদ্ধির সাথে সাথে রোধের পরিমাণও বৃদ্ধি পায়।

খ) প্রস্থচ্ছেদের সূত্রঃ কোন পরিবাহীর তাপমাত্রা, দৈর্ঘ্য ও ভৌত অবস্থা অপরিবর্তিত থাকলে ঐ পরিবাহীর রোধ তার প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফলের ব্যস্তানুপাতিক। পরিবাহীর রোধ R এবং প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল A হলে, R ∝ 1/A । অর্থাৎ, স্থির তাপমাত্রা ও দৈর্ঘ্য অপরিবর্তিত থাকলে, পরিবাহীর ক্ষেত্রফল বৃদ্ধির সাথে সাথে রোধের পরিমাণ কমতে থাকে।
রোধের দৈর্ঘ্যের সূত্র ও ক্ষেত্রফলের সূত্র সমন্বয় করলে আপেক্ষিক রোধ পাওয়া যায়। প্রশ্ন হচ্ছে আপেক্ষিক রোধ কাকে বলে? উত্তর হলোঃ কোনো নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ১ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১ বর্গ মিটার ক্ষেত্রফল বিশিষ্ট কোনো পরিবাহকের রোধকে আপেক্ষিক রোধ বলে। আপেক্ষিক রোধের একক হচ্ছে ওহম-মিটার।
রোধের দৈর্ঘ্য ও ক্ষেত্রফলের সূত্র সমন্বয় করলে পাই,
R ∝ L/A
=> R=ρL/A
সুতরাং,আপেক্ষিক রোধ ρ=RA/L
আপেক্ষিক রোধের একক হচ্ছে ওহম-মিটার(Ωm)। আপেক্ষিক রোধ তাপমাত্রা ও তারের উপাদানের উপর নির্ভর করে। তাই ভিন্ন ভিন্ন পদার্থের আপেক্ষিক রোধের মান ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। তামার তারের আপেক্ষিক রোধের মান হচ্ছে 1.78×10-8Ωm।
রোধ কি কি বিষয়ের উপর নির্ভর করে
কোন পরিবাহীর রোধ তাপমাত্রা, পরিবাহকের উপাদান, পরিবাহকের দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফলের উপর নির্ভর করে থাকে।
১। তাপমাত্রাঃ তাপমাত্র বৃদ্ধি পেলে পদার্থের মধ্যস্থিত অনুগুলোর কম্পন বৃদ্ধি পায়। এর ফলে পরিবাহীর মধ্য দিয়ে তড়িৎ পরিবাহিতা হ্রাস পায়। অর্থাৎ, তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে পরিবাহীর রোধের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
২। পরিবাহকের উপাদানঃ তড়িৎ পরিবাহীতার উপর ভিত্তি করে পদার্থকে পরিবাহী, অপরিবাহী এবং অর্ধপরিবাহী এই তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। পৃথিবীর সকল উপাদানের তড়িৎ পরিবহন করার ক্ষমতা এক নয়। কোনটি বেশি তড়িৎ পরিবহন করতে পারে আবার কোনটি কম। তাই পরিবাহকের উপাদানের উপর রোধ নির্ভর করে।
৩। পরিবাহকের দৈর্ঘ্যঃ তাপমাত্রা ও প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল স্থির থাকলে, পরিবাহকের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধির সাথে রোধের পরিমাণও বৃদ্ধি পেতে থাকে। বিপরীতভাবে, পরিবাহকে দৈর্ঘ্য হ্রাস পেলে রোধের পরিমাণ হ্রাস পায়।
৪। প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফলঃ রোধে পরিবাহকের প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল উপর নির্ভশীল। ক্ষেত্রফল হ্রাস পেলে রোধ বৃদ্ধি পায় এবং ক্ষেত্রফল বৃদ্ধি পেল রোধ হ্রাস পায়।
পরিশেষে,
এই আর্টিকেলটিতে রেজিস্ট্যান্স কাকে বলে? রেজিস্ট্যান্স কত প্রকার ও কি কি এবং এর সূত্র নিয়ে বিস্তারিত লেখার চেষ্টা করেছি। এই পোস্ট সম্পর্কে আপদের যদি কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। অতি দ্রুত সময় আমরা আপনার কমেন্টের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। ধন্যবাদ!