ন্যানো টেকনোলজি কি? কাকে বলে, এর ব্যবহার, সুবিধা ও গুরুত্ব সম্পর্কে জানুন

সুপ্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধু! এই প্রবন্ধে ন্যানো টেকনোলজি কি ( What is Nanotechnology)? কাকে বলে, এর ব্যবহার, সুবিধা, অসুবিধা ও গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আশাকরি আজকের আর্টিকেলটি আগত পরীক্ষারগুলোতে সঠিক উত্তর দিতে সাহায্য করবে। এছাড়াও আপনারা যারা ন্যানো প্রযুক্তির বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে আগ্রহী প্রয়োজনীয় তথ্যসম্ভার সমৃদ্ধ সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনযোগসহকারে পড়ুন…
ন্যানো টেকনোলজি কি
বর্তমান যুগ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগ। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কল্যাণে আমাদের পৃথিবী দিন দিন ছোট হয়ে যাচ্ছে। মানুষের সুবিধা ও অসুবিধার উপর ভিত্তি করে আবিষ্কার করছে বিভিন্ন টেকনোলজি। সেই সকল টেকনোলজির মধ্যে ন্যানো টেকনোলজি অন্যতম। এই টেকনোলজিটি শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষি, পরিবেশ এমন কি কম্পিউটারের মত অত্যাধুনিক যন্ত্রেও এর ব্যবহার লক্ষ্যনীয়।
কিন্তু অবাক করার বিষয় হচ্ছে ন্যানো টেকনোলজি কি এই সম্পর্কে অনেকেই অবগত নয়। তাই আজকের এই ফিচার আয়োজন। আপনারা হয়তো অতিক্ষুদ্র পরিমাপ মাইক্রো এর নাম শুনে থাকবেন। ন্যানো হচ্ছে মাইক্রোর থেকেও কয়েক বিলিয়ন গুন ক্ষুদ্র পরিমাপ। এখন নিশ্চয়ই আন্দাজ করতে পারতাছেন ন্যানো কত ছোট একটি পরিমাপ।
গ্রিক শব্দ Nanos থেকে Nano শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে। যেখানে Nanos শব্দের অর্থ হচ্ছে Dwraft যার বাংলা অর্থ দাড়ায় বামন বা জাদুকরী কমক্ষতাসম্পন্ন ক্ষুদ্রাকৃতির মানুষ। এছাড়াও এর আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে অতি ক্ষুদ্র, সূক্ষ্ম। কিন্তু আপনি যদি একে পরিমাপের দিক দিয়ে চিন্তা করেন তাহলে এর হিসাব দাঁড়াবে ১ মিটারের ১০০ কোটি ভাগের ১ ভাগ।
অর্থাৎ, ১ ন্যানোমিটার সমান হচ্ছে ১০−৯ মিটার। আর এই অতি ক্ষুদ্র স্কেল নিয়ে যে সমস্ত টেকনোলজির আবিষ্কার হয়েছে তাদেরকেই মূলত ন্যানো টেকনোলজি বলা হয়ে থাকে। এই ন্যানো টেকনোলজির মাধ্যমে পদার্থের অনু ও পরমানুকে অতি ক্ষুদ্র স্কেলে বিশ্লেষণ করা সম্ভব হয়েছে।
ন্যানো টেকনোলজি কাকে বলে
আপনারা যারা একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী তাদের প্রায় সময়ই ন্যানো টেকনোলজি কাকে বলে এই প্রশ্নটির সম্মুখীন হতে হয়। অনেকে হয়তো এর সঠিক উত্তর দিতে পারলেও অনেকে উত্তর দিতে ব্যর্থ হন। আপনারা যারা উত্তর দিতে পারেন না তারা আজকে এখান থেকে এর উত্তরটা জেনে নিবেন।
সাধারণ সংজ্ঞা অনুসারে, “পারমাণবিক বা আণবিক স্কেলে অতিক্ষুদ্র ডিভাইস তৈরি করার জন্য ধাতব বস্তুকে সুনিপুণভাবে কাজে লাগানোর বিজ্ঞান বা প্রযুক্তিকে ন্যানো প্রযুক্তি বা টেকনোলজি বলে।“

এছাড়া একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ডের পাঠ্যবই অনুসারে, “বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে ১ থেকে ১০০ ন্যানোমিটার আকৃতির কোন কিছু তৈরি করা এবং ব্যবহার করাকে ন্যানো টেকনোলজি বলে।”
এখান থেকে ন্যানো টেকনোলজি কাকে বলে এর যে সংজ্ঞাটি সবথেকে সহজ ও মনে থাকবে সেটিই লিখবেন। আশা করি আপনি সম্পূর্ণ নম্বর পাবেন।
ন্যানো টেকনোলজির ধারণা
একবিংশ শতাব্দীতে এসে ন্যানো টেকনোলজির বিভিন্ন উদ্ভাবন দৃশ্যমান হলেও মূলত এর সূচনা হয় অনেক আগে থেকেই। এই ন্যানো প্রযুক্তির ফলেই বৃহৎ আকৃতির জিনিসগুলি ক্ষুদ্র থেকে অতি ক্ষুদ্রে পরিণত হচ্ছে। ন্যানো টেকলোজির মাধ্যমে পৃথিবীর অনেক কঠিন কাজকে সহজ করা সম্ভব হয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে,পৃথিবীতে সর্বপ্রথম আইবিএম (IBM) কোম্পানি কম্পিউটার তৈরি করেন। যা অনেকের কাছে হার্ভাড মার্ক ওয়ান পরিচিত। এই কম্পিউটারটি প্রায় ৫০ ফুট লম্বা এবং প্রায় ৫ টন ওজনের ছিল। কিন্তু ন্যানো টেকনোলজির মাধ্যমে আইবিএম এর প্রথম তৈরি কম্পিউটার থেকে অধিক শক্তিশালী এবং আকারের কয়েকশ গুণ ছোট কম্পিউটার তৈরি করা সম্ভব হয়েছে।
ন্যানো টেকনোলজি নামক প্রযুক্তিটি একদিনে আবিষ্কৃত হয় নি। অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে ন্যানো টেকনোলজির সূচনা ঘটে। ১৯৫৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর আমেরিকার বিখ্যাত পদার্থবিদ রিচার্ড ফাইনম্যান সর্বপ্রথম ন্যানো টেকনোলজির ধারণা প্রদান করেন।
তিনি মূলত পরমাণুর প্রত্যক্ষ ম্যানিপুলেশনের মাধ্যমে তার সংশ্লেষণের সম্ভাবনা সম্পর্কে ধারণা প্রদান করেন। তাই রিচার্ড ফাইনম্যান (Richard Feynman) কে ন্যানো টেকনোলজির জনক হিসেবে গণ্য করা হয়। তার সংশ্লেষণ সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র যন্ত্রপাতির আবিষ্কার করা সম্ভব হয়েছে।
এই ন্যানো টেকনোলজির উপর ভিত্তি করে নতুন নতুন প্রযুক্তির আর্বিভাব হচ্ছে। এই প্রযুক্তিগুলি ব্যবহার করে বিজ্ঞান, চিকিৎসা, শিক্ষা, ইলেকট্রনিক্স প্রভৃতিতে অভাবনীয় পরিবর্তন আনা সম্ভব হয়েছে। এর ফলে প্রযুক্তির আধুনিকায়ন হচ্ছে এবং পৃথিবী দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।
জৈব প্রযুক্তি ও ন্যানো প্রযুক্তি কি
প্রযুক্তি পুরো বিশ্বে এক বিষ্ময়কর পরিবর্তন এনেছে। এই পরিবর্তন শুধু বস্তুর মধ্যে থেমে নেই বরং জীবের ক্ষেত্রেও গুরুত্ব ভূমিকা পালন করছে। জীবের বৃদ্ধি, নতুন বৈশিষ্ট্য অর্জন, জেনেটিকভাবে মুডিফাই করা ইত্যাদি কাজে জৈব প্রযুক্তি কাজ করছে। প্রযুক্তি এত উন্নত হলেও জৈব প্রযুক্তি ও ন্যানো প্রযুক্তি কি সম্পর্কে অনেকেই ধারনা রাখে না।
সাধারণত, যে প্রযুক্তির ব্যবহার করে কোনো জীবকোষ, অণুজীব বা তার অংশবিশেষ থেকে নতুন কোনো বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন জীব এর উদ্ভাবন বা উক্ত জীব থেকে প্রক্রিয়াজাত বা উপজাত দ্রব্য প্রস্তুত করা যায়, সেই প্রযুক্তিকে জৈব প্রযুক্তি বলে। জৈবপ্রযুক্তি হলো জীববিদ্যাভিত্তিক প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তিটি কৃষি, খাদ্য বিজ্ঞান, এবং ঔষধশিল্পে ইত্যাদি ক্ষেত্রে সবথেকে বেশি সব্যবহৃত হয়।

পক্ষান্তরে, যে প্রযুক্তি ব্যবহার করে পারমাণবিক বা আণবিক স্কেলে অতিক্ষুদ্র ডিভাইস তৈরি করার জন্য ধাতব বস্তুকে সুনিপুণভাবে কাজে লাগানো হয় সেই বিজ্ঞান বা প্রযুক্তিকে ন্যানো প্রযুক্তি বা ন্যানো টেকনোলজি বলে। ন্যানো টেকনোলজি বস্তুবিদ্যাভিত্তিক প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তিটি লেকট্রনিক্স, মহাকাশ বিজ্ঞান, নানোমেডিসিন, ন্যানো কোটিং, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, ন্যানো সেন্সর ইত্যাদি ক্ষেত্রে সবথেকে বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
ন্যানো টেকনোলজি কত প্রকার
ন্যানো টেকনোলজি টেক দুনিয়ায় নতুন ধার উন্মুক্ত করেছে। এই প্রযুক্তিটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জিনিস থেকে বড় জিনিস তৈরির পাশাপাশি বড় বড় জিনিস থেকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জিনিস তৈরিতেও সক্ষম। এর ফলে পৃথিবীতে নতুন নতুন প্রযুক্তির আবিষ্কার হচ্ছে। বিশ্ব বিজ্ঞানীদের ধারণা অদূর ভবিষ্যতে ন্যানো টেকনোলজি পুরো পৃথিবীকে লিড দিবে।
তাই ইউরোপ, আমেরিকা ও এশিয়ার প্রভৃতি উন্নত দেশগুলি ন্যানো টেকনোলজির উপর গবেষণা পরিমাণ বৃদ্ধি করছে। প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে এই গবেষণায় পিছিয়ে নেই তৃতীয় বিশ্বর দেশগুলোও। কোন এক জরিপে জানা গেছে, জাপানের জাতীয় গবেষণার মোট বাজেটের সিংহভাগ ন্যানো টেকনোলজি গবেষণার পিছনে ব্যয় করে।
উন্নত দেশগুলির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে ন্যানো টেকনোলজির উপর গবেষণার পরিমাণ বাড়াতে হবে। ন্যানো টেকনোলজির কোন বিষয়ে গবেষণা করা বেশি জরুরি তা আগে থেকেই নির্ধারণ করে নিতে হবে। সাধারণত ন্যানো টেকনোলজিকে দুটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিশ্লেষণ করা যায়।
তবে কেউ কেউ এই দুটি প্রক্রিয়াকে ন্যানো টেকনোলজির প্রকাভেদ হিসেবে মনে করে থাকেন। ন্যানো টেকনোলজির সেই দুটি প্রক্রিয়া হলো যথাক্রমেঃ উপর থেকে নিচ ( Top to Bottom ) এবং নিচ থেকে উপরে ( Bottom to Top)।
১। উপর থেকে নিচ ( Top to Bottom ): উপর থেকে নিচ প্রক্রিয়ায় বড় বড় জিনিস কে ছোট করে কেটে নির্দিষ্ট আকৃতি দেওয়া হয়ে থাকে। এই প্রক্রিয়াটির সাথে Etching প্রক্রিয়া ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সাধাণত Etching প্রক্রিয়ায় শক্তিশালী এসিড বা ক্ষার ব্যবহার করে Surface Preparation করা হয়। এর ফলে বড় জিনিসের Surface খুব সহজে এক্টিভ হয়ে যায়। বর্তমানের আধুনিক ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রপাতিতে উপর থেকে নিচ(Top To Bottom) প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।
২। নিচ থেকে উপরে ( Bottom to Top): নীচ থেকে উপর প্রক্রিয়ায় ছোট ছোট জিনিস থেকে বড় বড় কোন জিনিস তৈরি করা হয়। এই প্রক্রিয়াটি ন্যানো মিটার স্কেলের সাহায্যে সম্পন্ন হয়ে থাকে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জিনিসকে ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করে ন্যানো স্কেলের জিনিস তৈরি প্রস্তুত করা হয়ে থাকে। বর্তমানে এই প্রযুক্তিটি খাদ্য, বস্ত্র, ফুড প্যাকেজিং, ওষুধ শিল্পসহ নানা গৃহস্থলির কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
ন্যানো টেকনোলজির প্রয়োগ
উন্নত প্রযুক্তির ফলে সকল প্রকার ডিভাইসগুলি দিন দিন অনেক ছোট হয়ে যাচ্ছে। সেই উন্নত প্রযুক্তিগুলির মধ্যে ন্যানো টেকনোলজি অন্যতম। ফলে এই প্রযুক্তিটির ব্যবহার ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই আপনাদের বোজার সুবিধার্থে ন্যানো টেকনোলজির প্রয়োগ ক্ষেত্রগুলি সম্পর্কে বিস্তারিত দেওয়া হলঃ
১। কম্পিউটার হার্ডওয়্যারের বিভিন্ন যন্ত্রপাতিঃ কম্পিউটার আবিষ্কারের প্রাথমিক দিকে এর আকার ও ওজন অনেক বেশি ছিল। এর ফলে কোনে জায়গায় পরিবহন করা অনেক কষ্টসাধ্য হত। কিন্তু ন্যানো টেকনোলজির ফলে কম্পিউটার দিন দিন ছোট আকার ধারণ করতে শুরু হয়েছে। যা কম্পিউটার হার্ডওয়্যারের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি তৈরিতে ন্যানো টেকনোলজির প্রয়োগ ব্যাপক সারা দিয়েছে।
২। মোবাইলের প্রসের মাদারবোর্ডের যন্ত্রপাতিঃ আধুনিক কম্পিউটারগুলির মতোও মোবাইল ফোনগুলির কার্যক্ষমতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির মূলে রয়েছে ন্যানো টেকনোলজির প্রয়োগ। ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করে মোবাইলের ভিতরেও কম্পিউটারে ব্যবহৃত ক্ষুদ্র ডিভাইসগুলি ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়াও মোবাইলের বিভিন্ন প্রসেসর ও মাদারবোর্ড যন্ত্রপাতি প্রস্তুতিতে ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।
৩। ন্যানো রোবট প্রস্তুতিতেঃ যে সকল জায়গাতে মানুষের পক্ষে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে সেখানেই রোবটের ব্যবহার অধিক লক্ষ্যনীয়। রোবটের সাহায্য অনেক কঠিন কাজ করা সম্ভব হচ্ছে। এমন অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কাজ আছে যেগুলো মানুষের পক্ষে করা সম্ভব নয় সেখানে রোবট অতি সহজেই করে দিচ্ছে। এই সকল কাজ করার জন্য
৪। ঔষধ তৈরিতেঃ ঔষুধ তৈরিতে ন্যানো টেকনোলজি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। অনেক সময় ঔষুধে যে ক্যামিক্যাল ব্যবহার করা হয় তার পরিমাণ ন্যানো স্কেলে পরিমাপ করা হয়ে থাকে। তাই ঔষুধে ক্যামিকেল এর পরিমাণ সঠিক রাখতে ন্যানো টেকনোলজির প্রয়োগ করা হয়ে থাকে।
৫। কৃত্রিম অঙ্গ প্রতঙ্গ প্রস্তুতিতেঃ বিভিন্ন দুর্ঘটনায় অনেকে অঙ্গহানি ঘটে। আবার অনেকের দেখা যায় প্রাকৃতিকভাবে বিভিন্ন অঙ্গ বিকালাঙ্গ। এক্ষেত্রে এসব অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য কৃত্রিম অঙ্গ ব্যবহা করা হয়। নিখুঁতভাবে এসব অঙ্গ প্রস্তুতিতে ন্যানো টেকনোলজির প্রয়োগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৬। মহাকাশ অভিযানেঃ অতি প্রাচীন কাল থেকেই মানুষের মহাকাশ সম্পর্কে বিভিন্ন কৌতুহল রয়েছে। এসব কৌতুহল মেটানোর জন্য মানুষ মহাকাশ অভিযান করে। মহাকাশ অভিযান করার জন্য অনেক নিখুঁত যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হয়। এই সব নিখঁত প্রস্তুতিতেও ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার করা হচ্ছে।
এছাড়াও আরও বিভিন্ন কাজে ন্যানো টেকনোলজির প্রয়োগ হচ্ছে। যা আমাদের প্রাত্যহিক জীনব যাপনকে সুন্দর ও সহজ করতে সাহায্য করছে।
ন্যানো টেকনোলজির বৈশিষ্ট্য
ন্যানো টেকনোলজি অন্যান্য টেকনোলজি থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এর কিছু বৈশিষ্ট্য আরো বেশি আলাদা করে দিয়েছে। চলুন তাহলে ন্যানো টেকনোলজি বৈশিষ্ট্য গুলি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাকঃ
১। সাধারণত এদের আকার 1-100 ন্যানোমিটারের মধ্যে হয়ে থাকে।
২। ন্যানো পার্টিকেলের পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল আয়তনের তুলনায় অনেক বেশি হয়ে থাকে ফলে শক্তি বৃদ্ধি করতে সহজ হয়।
৩। এদের উন্নত অপটিক্স বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
৪। ন্যানো স্কেলে পদার্থের তাপ ও বৈদ্যুতিক পরিবাহিতা বৃদ্ধি পায়।
৫। ন্যানো টেকনোলজির উন্নত সংবেদন এবং সনাক্তকরণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়।
ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার
ন্যানো টেকনোলজি বর্তমান সময়ে প্রযুক্তির অন্যতম আবিষ্কার। এই টেকনোলজির ফলে মানব সভ্যতা অনেক অগ্রসর হয়েছে। পৃথিবী আজ বিশ্বগ্রামে পরিণত হয়েছ। মহূর্তের মাধ্যমে এক দেশ থেকে অন্য দেশে বিভিন্ন ধরণের সেবা গ্রহন করা সম্ভব হয়েছে। এই টেকনোলজি ব্যবহার করে জীবনকে আরও সুন্দর ও বিলাসবহুল করা সম্ভব হয়েছে। তাই ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাকঃ
- ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতিঃ বর্তমান সময়ের প্রায় সকল ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতিতে ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার করা হচ্ছে। ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহারা করার ফলে ইকেট্রনিক্স যন্ত্রপাতির স্থায়ীত্ব অনেক বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়াও যন্ত্রপাতিগুলি অধিক টেকসই ও ওজনে হালকা হয়ে যাচ্ছে। ফলে এদের কার্যক্ষমতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
- প্রসাধনীঃ ন্যানো টেকনোলজির ফলে প্রসাধনী শিল্পের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। বর্তমান সময়ে টাইটেনিয়াম ডাইঅক্সাইড ও জিংক অক্সাইডের মত ন্যানো পার্টিকেলগুলি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই ন্যানো পার্টিকেল সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি থেকে আমাদের ত্বককে রক্ষা করতে সাহায্য করছে।
- কৃষিক্ষেত্রেঃ ন্যানো টেকনোলজি কৃষিক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার দাড় উন্মোচন করেছে। ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার করার ফলে কৃষক অল্প জমিতে অধিক ফসল উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়াও নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন, স্যার ও কীটনাশক প্রয়োগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
- বস্ত্রশিল্পঃ ইদানিং বস্ত্রশিল্পে ন্যানো পার্টিকেলের ব্যবহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ন্যানো পার্টিকেল ব্যবহার করে ওয়াটার প্রুফ জ্যাকেট, রেইনকুটের মত আরো নানা পোশাক সামগ্রী প্রস্তুত করা হচ্ছে।
- চিকিৎসাক্ষেত্রেঃ ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করার মাধ্যমে ক্যান্সারের মত কঠিন রোগ থেকেও মুক্তি পাওয়া সম্ভব হচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন অপারেশন কার্যক্রমেও ন্যানো প্রযুক্তির প্রশংসনীয় অবদান রয়েছে।

- খেলাধুলাঃ ন্যানো প্রযুক্তির ছোয়ায় খেলাধুলার জগৎ অনেক আধুনিক হয়ে যাচ্ছে। এটি খেলাধুলা মনিটরিং ও পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে। এছাড়াও বর্তমানে টেকসই টেনিস বল প্রস্তুতিতেও ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার করা হচ্ছে। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করার ফলে টেনিস বলের লাফানোর ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ও শক্তিশালী করা সম্ভব হয়েছে।
- জ্বালানি ক্ষেত্রেঃ ন্যানো টেকনোলজির ফলে কম খরচে অধিক জ্বালানি তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। ফলে জ্বালানি শিল্পেও এই প্রযুক্তিটি বিরাট ভূমিকা পালন করছে। সাধারণত হাইড্রোজেন আয়ন থেকে নানা ধরণের ব্যাটারি, ফুয়েল সেল প্রস্তুতে ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।
- পরিবেশ রক্ষাঃ বর্তমান সময়ে বিশ্বের প্রতিটি দেশই পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে অনেক কনসার্ন। তারা পরিবেশের প্রাকৃতিক উপাদান যেমনঃ মাটি, পানি, বায়ু ইত্যাদি দূষণরোধে নানা ধরণ পদক্ষেপ গ্রহন করছে। প্রধানত শিল্প কারখানা ও বিভিন্ন যানবাহন থেকে নির্গত কালো ধোয়া পরিবেশের অধিক দূষতি করছে। কিন্তু ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহার করার মাধ্যমে এই দূ্ষণ অনেকটাই কমানো সম্ভব হয়েছে। এছাড়াও পানি দূষণ রোধেও বিভিন্ন ধরণের ন্যানো পার্টিকেলের ব্যবহার করা হচ্ছে।
ন্যানো টেকনোলজির সুবিধা
ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষের পথচলা অনেক সহজ হয়েছে। তাই ন্যানো টেকনোলজির সুবিধা গুলি হচ্ছেঃ
১। ন্যানো টেকনোলজির মাধ্যমে অধিক সূক্ষ্ম ডিভাইস তৈরি করা সম্ভব।
২। এই প্রযুক্তির সাহায্যে উৎপাদিত ইলেকট্রনিক যন্ত্র অধিক মজবুত ও টেকসই হয়ে থাকে।
৩। ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহারের ফলে উৎপাদিত আকারে তুলনামূলক ছোট এবং ওজনে হালকা ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হয়।

৪। এই প্রযুক্তি ব্যবহারে উৎপাদিত খাদ্যজাত পণ্যের গুণাগুণ রক্ষা ও স্বাদ বৃদ্ধি করা সম্ভব হচ্ছে।
৫। এর মাধ্যমে পানি ও বায়ু দূষণ রোধ করা যায়।
৬। এর সাহায্যে অনেক কঠিন কাজও দ্রুত সময়ে সমাধান করা যায়।
৭। ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহারের মাধ্যমে ফুয়েল সেল, সোলার সেল মত ডিভাইস দিয়ে সস্তায় শক্তি উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে।
৮। এই প্রযুক্তিটি ইলেকট্রনিক শিল্পে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে।
৯। ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহারের মাধ্যমে ক্যান্সারের মত দুরারোগ্য ব্যাধি হাত থেকে দ্রুত আরগ্য লাভ যায়।
ন্যানো টেকনোলজির অসুবিধা
ন্যানো টেকনোলজি আমাদের জীবনকে আরও সহজ করে দিয়েছে। তবে ন্যানো টেকনোলজির সুবিধা এর পাশাপাশি কিছু অসুবিধাও লক্ষ্য করা যায়। সাধারণত এই অসুধিবার পরিমাণ অতি নগন্য হয়ে থাকে। তাই অনেক সময় এগুলি বর্জন করা যায়। নিচে ন্যানো টেকনোলজির অসুবিধা গুলি উল্লেখ করা হলোঃ
১। ন্যানো পার্টিকেল মানব শরীরের জন্য অনেক ক্ষতিকর।
২। স্থির বিদ্যুতের সাহায্যে ন্যানো টেকনোলজি দিয়ে সার্কিট তৈরি করা যায় না।
৩। ন্যানো টেকনোলজি অধিক ব্যয়বহুল।
৪। ন্যানো টেকনোলজি দিয়ে তৈরি ডিভাইজগুলি পরিচালনার জন্য দক্ষ ইঞ্জিনিয়ারের প্রয়োজন।
৫। ন্যানো টেকনোলজির অধিক ব্যবহারে পরিবেশগত ক্ষতি সম্ভাবনা রয়েছে।
পরিশেষে,
ন্যানো টেকনোলজি আধুনিক প্রযুক্তির অন্যতম আবিষ্কার। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হচ্ছে আমাদের অনেকে ন্যানো টেকনোলজি কি? এর ব্যবহার সম্পর্কে অজ্ঞ। ন্যানো টেকনোলজির অবদানে বিশ্বের অনেক কঠিন কঠিন কাজের সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে। বিশ্বের সর্বত্র এই প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে প্রচলিত হলে এর থেকে আরো অনেক সুবিধা ভোগ করা যাবে। তাই প্রযুক্তির এই যুগে বিশ্বের আধুনিক দেশগুলির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে ন্যানো টেকনোলজি বিষয়ে গবেষণার পরিমাণ বাড়াতে হবে। দেশের প্রতিটি জনগণকে এর ব্যবহার ও গুরুত্ব সম্পর্কে সঠিক ধারণা প্রদান করতে হবে।