প্রযুক্তি

জৈব প্রযুক্তি কি? কাকে বলে, এর ব্যবহার ও প্রয়োগ ক্ষেত্র সম্পর্কে বিস্তারিত

সুপ্রিয় পাঠক/ পাঠিকা আপনি কি জানেন, জৈব প্রযুক্তি কি? প্রশ্নটা দেখে আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় হচ্ছে জৈব প্রযুক্তি বা বয়োটেকনোলজি ( Bio Technology) সম্পর্কিত। জৈব প্রযক্তির সাহয্যে উদ্ভিদ এবং প্রাণীর প্রজনন ও উন্নত জাত উদ্ভাবনের সম্ভব হয়েছে। এছাড়াও কল-কারখানা থেকে নির্গত বর্জ্য প্রক্রিয়াকণসহ বিভিন্ন পরিবেশ বান্ধব প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালনে জৈব প্রযুক্তির অবদান রয়েছে। তাই আজকের এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে বায়োটেকনোলজি কি, কাকে বলে, এর ব্যবহার ও প্রয়োগ ক্ষেত্র সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাবেন।

জৈব প্রযুক্তি কি

আধুনিক বিজ্ঞান মানব কল্যাণে উদ্ভিদ ও প্রাণীর বিভিন্ন অংশ নিয়ে প্রতিনিয়তই গবেষণা করছে। এই গবেষণার মাধ্যমে উদ্ভাবিত হচ্ছে নতুন বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন নানা প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী। এই সকল কিছুর মূলে রয়েছে জৈব প্রযুক্তি বা বয়োটেকনোলজি (Bio Technology)। এই প্রযুক্তিটি অধিক ফলনযুক্ত ফসল উদ্ভিদ, পরিবেশ দূষণমুক্তকরণ ছাড়াও মানব সমাজকে নানা ধরণের রোগ মুক্তি থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

প্রযুক্তিটি মানব কল্যাণে এত এত অবদান রাখার পরও আজও অনেকে কাছে অপরিচত। যদি কোন ব্যক্তিকে জৈব প্রযুক্তি কি? এই প্রশ্ন করা হয় তাহলে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকবে। ঘুম থেকে উঠে ঘমুনোর আগ পর্যন্ত প্রযুক্তিটি ব্যবহার করছে অথচ এর সম্পর্কে জানছেই না। চলুন তাহলে প্রযুক্তিটি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।

জৈব প্রযুক্তি বা বায়োটেকনোলজি হচ্ছে এমন একটা পদ্ধতি বা কৌশল, যার মাধ্যমে কোন জীব বা জীবকোষ, অণুজীব বা তার অংশবিশেষ এর DNA পরিবর্তনের মাধ্যমে নতুন কোন বৈশিষ্ট্য সম্পূর্ণ জীবের উদ্ভাবন বা উক্ত জীব থেকে প্রক্রিয়াজাত বা উপজাত দ্রব্য প্রস্তুত করা যায়।

জৈব প্রযুক্তি বিদ্যার জনক কে

আদিম মানুষ বেচেঁ থাকার জন্য অতি প্রাচীনকাল থেকেই কৃষি কাজ করত। তাই কৃষিকাজে জৈব প্রযুক্তি বহুকাল পূর্ব থেকেই ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে বর্তমানে উদ্ভিদের চাষাবাদে এর আধুনিকতম প্রয়োগ দেখা যায়। জৈব প্রযুক্তির আধুনিকতম প্রয়োগের মাধ্যমে অধিক ফলনযুক্ত ফসল উদ্ভিদ, নতুন নতুন ফসলের জাতের উদ্ভাবন, রোগ প্রতিরোধী উদ্ভিদ উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়েছে।

জৈবপ্রযুক্তি বা বয়োটেকনোলজি শব্দটি ১৯১৯ সালে হাঙ্গেরীয় কৃষি প্রকৌশলী কার্ল এরকি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন। এজন্য কার্ল এরকি (Karl Erki) কে জৈব প্রযুক্তি বিদ্যার জনক বলা হয়ে থাকে। যদিও এর পূর্বেই মানুষ জৈব প্রযুক্তি তথা ফার্মেনটেশন বা গাজঁন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অ্যালকোহল প্রস্তুত করতে সক্ষম হয়েছে। তবে জৈবপ্রযুক্তির কেবল সত্তর দশকের পর থেকেই এর কলাকৌশল ও প্রয়োগের প্রচার প্রসার ঘটতে শুরু করে।

জৈব প্রযুক্তি কাকে বলে

বর্তমানে সময়ে জৈব প্রযুক্তিটি আধুনিক মনে হলেও এর প্রয়োগ কিন্তু বহু বছর পূর্বে থেকে লক্ষ্য করা যায়। সাধাণ মানুষের কাছে এই প্রযুক্তিটি অপরিচত হলেও জীববিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের কাছে খুবই পরিচিত। তাদের পরিক্ষায় প্রায় সময়ই জৈব প্রযুক্তি কাকে বলে এই ধরনের প্রশ্নে প্রায়ই চলে আসে।

জৈব প্রযুক্তি বা বায়োটেকনোলজি (Bio Technology) শব্দটি Bio ও Technology শব্দদ্বয়ের সমন্বয়ে গঠিত। অর্থাৎ, কোন জীব যেমনঃ উদ্ভিদ, প্রাণি, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অণুজীব, জীবাণু, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ইত্যাদির কোন অংশ ব্যবহার করে এদের ডিএনএ পরিবর্তন করে মানব কল্যাণের জন্য ব্যবহারযোগ্য কিছু তৈরি করা।

তবে পাঠ্যবইয়ের ভাষায়, জৈব প্রযুক্তি বা বয়োটেকনোলজি বলতে বোঝায় কোন জীবন্ত উদ্ভিদ, প্রাণী, অণুজীব বা তাদের অংশবিশেষ ব্যবহার করে মানবতার কল্যাণে ব্যবহারোপযোগী উন্নত বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন নতুন উদ্ভিদ, প্রাণী, অণুজীব বা দ্রব্য উৎপাদনে প্রয়োগকৃত প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে যে জীবটি ব্যবহার করা হবে তার থেকে উন্নত বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন নতুন জীব তৈরি করা হয়ে থাকে। এর ফলে মানব কল্যাণে ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়।

জৈব প্রযুক্তি ও ন্যানো প্রযুক্তি

প্রিয় পাঠক আশা করি পূর্বের আলোচনার মাধ্যমে জৈব প্রযুক্তি কি বা কাকে বলে এই সম্পর্কে বেশ কিছু ধারনা পেয়েছেন। এখন আমি আপনাদেরকে ন্যানো প্রযুক্তি সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। যদিও ন্যানো প্রযুক্তি জৈব প্রযুক্তির সাথে তেমন সম্পর্কযুক্ত নয়। তবে এই প্রযুক্তি সম্পর্কেও কিছু জ্ঞান রাখা প্রয়োজন। চলুন তাহলে ন্যানো প্রযুক্তি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।

আপনারা হয়তো অনেকে বিভিন্ন ছোট ছোট পরিমাপ প্রদ্ধতি নাম শুনে থাকবেন। সেগুলোর মধ্যে ন্যানো শব্দটিও অতি ক্ষুদ্র স্কেলের পরিমাপ বোঝাতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ন্যানো (Nano) শব্দটি গ্রিক শব্দ Nanos থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। ১ ন্যানোমিটার সমান হচ্ছে ১০−৯ মিটার। এই ক্ষুদ্র পরিমাপের সাহায্যে বিভিন্ন ইলেকট্রিক, কম্পিউটার, ইলেকট্রনিক্স জিনিসপত্র তৈরি করা হয়।

এছাড়াও ন্যানো প্রযুক্তি আধুনিক সভ্যতাকে আরও আধুনিক হতে সাহায্য করছে। এই প্রযুক্তিটি পরিবেশ দূষণরোধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সাধারণত যে প্রযুক্তির সাহায্যে পারমাণবিক বা আণবিক স্কেলে অতিক্ষুদ্র ডিভাইস তৈরি করার জন্য ধাতব বস্তুকে সুনিপুণভাবে কাজে লাগানো হয় সেই বিজ্ঞান বা প্রযুক্তিকে ন্যানো প্রযুক্তি বা টেকনোলজি বলে।

জৈব প্রযুক্তি ও ন্যানো প্রযুক্তির মধ্যে পার্থক্য

মানব সভ্যতা দিন দিন আধুনিক হতে চলছে। এই আধুনিকতার পেছনে জৈব প্রযুক্তি ও ন্যানো প্রযুক্তির গুরত্ব অপরিসীম। যদিও জৈব প্রযুক্তি ও ন্যানো প্রযুক্তির মধ্যে পার্থক্য রয়েছ। একদিকে জৈব প্রযুক্তি বা জীব প্রযুক্তির মাধ্যমে জীবের বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করে নতুন নতুন বৈশিষ্ট্যপূর্ণ মানব কল্যাণে উপযোগি জীবের উদ্ভাবন করা সম্ভব হচ্ছে।

জৈব প্রযুক্তি ও ন্যানো প্রযুক্তির মধ্যে পার্থক্য
জৈব প্রযুক্তি ও ন্যানো প্রযুক্তির মধ্যে পার্থক্য

অন্যদিকে ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহার করে অতি ক্ষুদ্র স্কেলে অর্থাৎ, আণবিক বা পারমানবিক স্কেলে অতি ক্ষুদ্র ডিভাইস তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। দুটি প্রযুক্তিই মানব ক্যালণে ব্যাপক গুরুত্ব বহন করছে। নিচে জৈব প্রযুক্তি ও ন্যানো টেকনোলজির মধ্যে পার্থক্য সমূহ তুলে ধরা হলঃ

পার্থক্যের বিষয়জৈব প্রযুক্তিন্যানো প্রযুক্তি
সংঙ্গাযে প্রযুক্তির সাহায্যে কোন জীবন্ত জীবকোষ, অণুজীব বা তার অংশবিশেষ ব্যবহার করে তার DNA এর পরিবর্তন করে নতুন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন জীব এর উদ্ভাবন অথবা জীব থেকে প্রক্রিয়াজাত বা উপজাত দ্রব্য প্রস্তুত করা যায়, সেই প্রযুক্তিকে জৈব প্রযুক্তি বলে।যে প্রযুক্তির সাহায্যে পারমাণবিক বা আণবিক স্কেলে অতি ক্ষুদ্র ডিভাইস তৈরি করার জন্য ধাতব বস্তুকে সুনিপুণভাবে কাজে লাগানো হয় সেই প্রযুক্তিকে ন্যানো প্রযুক্তি বা টেকনোলজি বলে।
 পদ্ধতিজৈব প্রযুক্তির বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে টিস্যু কালচার ও জিন প্রকৌশল উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে।ন্যানো প্রযুক্তিতে দুটি প্রদ্ধতি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেমনঃ বটম আপ এবং টপ ডাউন
পরিবর্তনজৈব প্রযুক্তি মাধ্যমে জীবের মধ্যে বৈশিষ্ট্যগত পরিবর্তন হয়।ন্যানো প্রযুক্তির সাহায্যে বিভিন্ন যন্ত্রপাতির উন্নতি হয়।
আকারজৈব প্রযুক্তি জিন বা DNA এর আকারের স্কেলে নিয়ে প্রযুক্তি।ন্যানো প্রযুক্তি হলো কাবন বা অন্য কোন পরমানুর ১০−৯ মিটার আকার নিয়ে প্রযুক্তি।
মাধ্যম জৈব প্রযুক্তি DNA transplant  এর মাধ্যমে হয়ে থাকে। ন্যানো প্রযুক্তি পারমাণবিক বা আণবিক স্কেলে ন্যানো পার্টিকেলে পরিণত হওয়ার মাধ্যমে হয়ে থাকে।
জৈব প্রযুক্তি ও ন্যানো প্রযুক্তির মধ্যে পার্থক্য

জৈব প্রযুক্তির প্রয়োগ ক্ষেত্র

প্রাচীন কাল থেকে মানুষ প্রাকৃতিক উপাদানের উপকরনের উপর বিভিন্ন গবেষণা চালায়। বেচেঁ থাকার তাগিদে আবিষ্কার করে নানা প্রযুক্তি। সেই প্রযুক্তিগুলির মধ্যে জৈব প্রযুক্তি অন্যতম ভূমিকা পালন করছে। আদিম সমাজ কৃষিভিত্তিক হওয়ায় জৈব প্রযুক্তি সূচনা হয় বিভিন্ন কৃষি কাজের মধ্য দিয়ে।

কিন্তু বর্তমানে এর প্রয়োগ কৃষির উপর থেমে নেই। কৃষি ছাড়াও আরও অন্যান্য সেক্টরে এই প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। প্রধানত জৈব প্রযুক্তির প্রয়োগ ক্ষেত্র গুলিকে ৪ টি ভাগে করা যায়। যেমনঃ স্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্পে শস্য ও অন্যান্য পণ্যের ব্যবহার এবং পরিবেশ।

১। স্বাস্থ্যঃ জৈব প্রযুক্তি স্বাস্থ্য খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। জৈব প্রযুক্তির মাধ্যমে রোগীর রোগ নির্ণয় ও বিভিন্ন প্রতিষেধক ইত্যাদির উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়েছে। জৈব প্রযুক্তির মাধ্যমে ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগের থেরাপি, অ্যান্টিবায়োটিক, কৃত্রিম হরমোন ও স্টেমকোষ ইত্যাদি তৈরি করা সম্ভ হয়েছে।

এছাড়াও অনেক বিকলাংঙ্গ রোগীরদের অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য কৃত্রিম অঙ্গ প্রস্তুত করা সম্ভব হচ্ছে। এতে চিকিৎসা খাত উন্নত হচ্ছে জৈব প্রযুক্তির প্রয়োগ ক্ষেত্র এর মাধ্যমে।

২। কৃষিঃ জৈব প্রযুক্তির সূচনা ঘটে কৃষি কাজের মাধ্যমে। পূর্বে একটি জমিত যতটুকু ফসল হত বর্তমানে সেই জমিতে তার চেয়ে ফসল পাওয়া সম্ভব হচ্ছে। জৈব প্রযুক্তির প্রয়োগ ক্ষেত্র এর বিকাশের কারনে উন্নত জাত, রোগ প্রতিরোধী উদ্ভিদ তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে।

এমনকি যে সকল উদ্ভিদের ফুল, ফল হয় না তাদের দেহের অংশ ব্যবহার করে টিস্যু কালচারের মাধ্যমে বংশবিস্তার করা সম্ভব হয়েছ। জৈব প্রযুক্তির প্রয়োগ শুধু উদ্ভিদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বর্তমান সময়ে মানুষ প্রাণীতেও জৈব প্রযুক্তি কি এবং এর ব্যবহার নিয়ে গবেষণা করছে।

এর ফলে বিভিন্ন উন্নত জাতের পশু, মাছ এবং ননীবিহীন দুধ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছে। এগুলি ছাড়াও দুগ্ধজাত পণ্য যেমনঃ দৈ, পনির, ঘি, ছানা ও মাখন ইত্যাদি প্রস্তুত করা হচ্ছে।

জৈব প্রযুক্তির প্রয়োগ ক্ষেত্র
জৈব প্রযুক্তির প্রয়োগ ক্ষেত্র

৩। শিল্পে শস্য ও অন্যান্য পণ্যের ব্যবহারঃ জৈব প্রযুক্তির মাধ্যমে শিল্পে শস্য ও অন্যান্য পণ্যের উৎপাদনে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে জৈব প্রযুক্তির প্রয়োগ ক্ষেত্র গুলি ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে। জৈব প্রযুক্তি শুধু খাদ্য উৎপাদনের পাশাপাশি খাদ্য প্রিজারভেশন করতেও সাহায্য করে থাকে।

বায়োটেকনোলজি খাদ্যের পুষ্টিগুণ ও খাদ্যের স্বাদ বাড়াতে সাহায্য করে থাকে। এছাড়াও অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার কমিয়ে দেয়। ফলে দেহ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অব্যাহত থাকে। জৈব প্রযুক্তি প্রয়োগ করার ফলে দেশে পণ্যের চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করা ফলে। যা শিল্পক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

৪। পরিবেশঃ জৈব প্রযুক্তি স্বাস্থ্য, কৃষি ও শিল্প খাত ছাড়াও আরও একটি খাতে বিরাট ভূমিকা রয়েছে। পরিবেশ জৈব প্রযুক্তির প্রয়োগ ক্ষেত্র হিসেবে অন্যতম অবস্থানে রয়েছে। দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে কলখানার সংখ্যাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব কলখানার অতিরিক্ত বর্জ্য পদার্থ, কালো ধোয়া ও ক্ষতিকর ক্যামিকেল পরিবেশের সাথে মিশে পরিবেশকে দূষিত করে ফেলে। কিন্তু কলখানা থেকে নির্গত বর্জ্য প্রদার্থ প্রক্রিয়াকরণে জৈব প্রযুক্তির ভূমিকা রয়েছে।

সমুদ্রে তেলবাহী জাহাজ চলাচলের সময় ডিজেল, পেট্রোল এবং বিভিন্ন অপরিশোধিত তেল সমুদ্রের পানিকে দূষিত করে। এর ফলে সমুদ্রে বসবাসকারী উদ্ভিদ ও প্রাণীর প্রাণ সংশয় থাকে। এই ধরনের দূষণ থেকে পরিবেশকে রক্ষা করতে জৈব প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

জৈব ও অজৈব পদার্থের মিশ্রনের ফলে সিউয়েজ তৈরি হয়। সাধারণত বাথরুমের পানির সাথে সাবান, খাদ্যের অবশিষ্ট অংশ, পয়ঃপ্রনালীর থেকে নির্গত মলমূত্র সিউয়েজ এর অন্যতম উৎস। এসব সিউয়েজ পদার্থে বিভিন্ন ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া, অনুজীব, ভাইরাস বসবাস করে। যা মানুষসহ ও অন্যান্য প্রাণীর রোগ ব্যাধি সৃষ্টি করে থাকে। কিন্তু জৈব প্রযুক্তি ব্যবহার করার মাধ্যমে সিউয়েজ পদার্থকে সংশ্লেষণ করে তরলে পরিণত করা সম্ভব হয়েছে।

জৈব প্রযুক্তির প্রকারভেদ বা শাখা সমূহ

জৈব প্রযুক্তির প্রকারভেদ বা বিভিন্ন শাখা সমূহের নাম নিচে দেওয়া হলঃ

  • গোল্ড বায়োটেকনোলজি বা স্বর্ণ জৈবপ্রযুক্তি
  • ব্লু বায়োটেকনোলজি বা নীল জৈবপ্রযুক্তি
  • গ্রিন বায়োটেকনোলজি বা সবুজ জৈবপ্রযুক্তি
  • রেড বায়োটেকনোলজি বা লাল জৈবপ্রযুক্তি
  • হোয়াইট বায়োটেকনোলজি বা সাদা জৈবপ্রযুক্তি
  • ইয়োলো বায়োটেকনোলজি বা হলুদ জৈবপ্রযুক্তি
  • গ্রে বা ধূসর জৈবপ্রযুক্তি
  • ব্রাউন বা বাদামি জৈবপ্রযুক্তি
  • ভায়োলেট বা বেগুনি জৈবপ্রযুক্তি
  • ডার্ক বা অন্ধকার জৈবপ্রযুক্তি

জৈব প্রযুক্তির ব্যবহার

জৈব প্রযুক্তি মানব জীবনকে অনেক সুন্দর করে দিয়েছে। জৈব প্রযুক্তির মাধ্যমে নতুন বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণীর উদ্ভাবণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এরা দেশের বর্ধিত জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা মেটিয়ে অতিরিক্ত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করতে সাহায্য করে। পরিবেশ দূষণমুক্তকরণে জৈব প্রযুক্তির অন্যতম ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। প্রায় নানাবিধ সমস্যার সমাধানে জৈব প্রযুক্তির উপর নির্ভর হতে হয়। তাই জৈব প্রযুক্তির ব্যবহার গুলি নিচে উল্লেখ করা হলঃ

১। উদ্ভিদ প্রজনন ও উন্নত জাত উদ্ভাবনে জৈব প্রযুক্তির ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
২। জৈব প্রযুক্তির মাধ্যমে বায়োগ্যাস প্রস্তুত করা হয়।
৩। ব্যাক্টেরিয়া ও ছত্রাক দ্বারা এনজাইম উপাদান প্রস্তুতে জৈব প্রযুক্তির প্রয়োগ করা হয়ে থাকে।
৪। কৃত্রিম হরমোন প্রস্তুতেও জৈব প্রযুক্তি গুরুত্বপূণ ভূমিকা রয়েছে।
৫। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে দুগ্ধজাত উপাদান প্রস্তুত করা হয়ে থাকে।
৬। এটি সিউয়েজ আত্ত্বীকরণে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

জৈব প্রযুক্তি কি এবং জৈব প্রযুক্তির ব্যবহার
জৈব প্রযুক্তি কি এবং জৈব প্রযুক্তির ব্যবহার

৭। এটি উদ্ভিদ থেকে অধিক ফলন উৎপাদন করতে সাহায্য করে।
৮। জৈব প্রযুক্তি মাটিকে অতিরিক্ত লবণ ও শক্ত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে।
৯। জৈব প্রযুক্তি ব্যবহার করার ফলে অতিরিক্ত সার ও কীটনাশকের ব্যবহার হ্রাস করা সম্ভব হয়েছে।
১০। এটি ফসলের ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ দমনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
১১। জৈব প্রযুক্তি প্রয়োগের ফলে মুরগি থেকে অধিক ডিম এবং গরু থেকে অধিক মাংস ও দুধ পাওয়া যাচ্ছে।
১২। এছাড়াও খাদ্যের প্রাকৃতিক গুণাগুণ বজায় রাখতে জৈব প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

পরিশেষে,

আশা করি জৈব প্রযুক্তি কি? কাকে বলে, এর ব্যবহার ও প্রয়োগ ক্ষেত্র সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। বর্তমান সময়ে পরিবেশ দূষণ নিয়ে বিশ্বের প্রতিটি দেশ চিন্তিত। সেই জায়গায় এই বায়োটেকনোলজি পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তাই মানব কল্যাণে জৈব প্রযুক্তির গবেষণার পরিমাণ বাড়াতে হবে। তাহলেই পৃথিবীতে উদ্ভিদ ও প্রাণীর বাস্তুসংস্থানের ভারসাম্য বজায় থাকবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button