ছারপোকা তাড়ানোর উপায় কি ও ছারপোকা কেন হয় বিস্তারিত জানুন।

ছারপোকা তাড়ানোর উপায় কি
আমরা যারা শহরে বসবাস করি ছারপোকা নামক রক্তচোষা প্রাণীর অত্যাচারের সম্মুখীন হয়নি এমন লোক খুব কমই আছেন। বিশেষ করে ব্যাচেলর রুম গুলোর বিছানায়, সোফায়, বালিশের এদের উপস্থিতি বেশি লক্ষ্য করা যায়। ছারপোকা তাড়ানোর জন্য আমরা অনেকে অনেক কিছু ব্যবহার করে থাকি।
হকারদের কাছ থেকে অনেক ধরনের ওষুধ ব্যবহার করার পরেও ছারপোকা চিরতরে যায় না। তাই আজকে আমি আপনাদেরকে চিরতরে ছারপোকা তাড়ানোর উপায় কি সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো।
ছারপোকা কেন হয়
বাসা বাড়ি পরিষ্কার রাখার পরও ছারপোকা কেন হয় এই প্রশ্ন সবার মনেই জাগে। ছারপোকা শুধু নোংরা জায়গায় হয় না। ছারপোকা নোংরা,আর্দ্র বিছানা, বালিশ, সোফা, বুকশেলফে বাসা বাধে। এমনকি বাস, ট্রেন, অ্যারোপ্লেনের মত জায়গায় এরা থাকতে পারে। ভ্রমণের সময় আপনার জিনিসপত্রের সাথে বাসায় চলে আসতে পারে। এরা সম্পূর্ণ নিশাচর না হলেও দিনের বেলায় ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকে। রাতের বেলায় চুপিচুপি রক্ত চোষা শুরু করে।
ছারপোকা তাড়ানোর উপায় কি
বাসা, অফিস, হল কোন জায়গাতে ছারপোকা নেই? আপনি আপনার সাধের বিছানায় ঘুমাতে না পারলেও সে ঠিকিই আরাম করে থাকবে। ছারপোকা সাধারনত বিছানা, বালিশ, সোফা, বুকশেলফে আসন গেড়ে বসে। একবার বাসায় প্রবেশ করলে এদের তাড়ানোর মুশকিল হয়ে পড়ে।
ছারপোকাকে রক্তচোষা প্রাণী বলা হয় কেননা এই পোকা মানুষের অগচোরে রক্ত চুষে নেয়। রাতের ঘুম হারাম করতে এর জুড়ি নেই। আপনাদের অনেকে ছারপোকা তাড়ানোর উপায় কি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চেয়েছেন। আমারা প্রাকৃতিকভাবেই এই রক্তচোষা প্রাণিটিকে তাড়াতে পারি। ছারপোকা তাড়াতে নিচের পদ্ধতিগুলি অবলম্বন করলে অতি সহজেই আপনার বাসা বাড়ি এর থেকে মুক্তি মেলবে।
উচ্চতাপ / সূর্যের তাপঃ উচ্চতাপ বা সূর্যের তাপে ছারপোকা মারা যায়। সাধারনত ১১৩ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রার উপরে ছারপোকা বাঁচতে পারে না। আপনাদের ঘরে যদি ছারপোকার পরিমাণ অতি মাত্রায় দেখা দেয় , তাহলে সূর্যের তাপে বালিশ, সোফা, কাঁথা ও বিছানার চাঁদর শুকাতে হবে।
সূর্যের অতি তাপমাত্রায় ছারপোকার পাশাপাশি এর ডিমও মারা যাবে। বাসা বাড়ি থেকে চিরতরে ছারপোকা তাড়াতে এই প্রক্রিয়াটি খুবই কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই কয়েকদিন পর পর ছারপোকা আক্রান্ত জিনিসপত্র রোদে শুকাতে হবে।
গরম পানিঃ ফুটন্ত গরম পানিতে ছারপোকা বাঁচতে পারে না। ১১৩ ডিগ্রী তাপমাত্রার গরম পানিতে বালিশের কাভার, কাঁথা, সোফার কাভার ও ছারপোকা আক্রান্ত জিনিসপত্র কিছুক্ষন ভিজিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। গরম পানি দিয়ে সপ্তাহে অন্তত ১ বার সবকিছু পরিষ্কা করে নিলে ছারপোকা অস্তিত্ব থাকবে না।

ইউক্যালিপিটাস গাছের পাতাঃ ছারপোকা তাড়ানোর উপায় হিসেবে ইউক্যালিপিটাস গাছের পাতা অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। আপনি যদি আপানার বাসা থেকে চিরতরে ছারপোকা তাড়াতে চান ইউক্যালিপিটাস গাছের পাতা ব্যবহার করতে পারেন।
ইউক্যালিপিটাস গাছের পাতার ঝাঝালো গন্ধে ছারপোকা বাঁচতে পারে না। প্রথমে ইউক্যালিপিটাস গাছের পাতা রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। এরপর জালের ব্যাগের পুটলি বেধে তোশকের নিচে রেখে দিলে ছারপোকা চিরতরে বিধায় নিবে।
পুদিনা পাতাঃ আপনারা যারা ছারপোকা তাড়ানোর উপায় কি বা কিভাবে প্রাকৃতিকভাবে ছারপোকা তাড়াবেন এ নিয়ে চিন্তিত পুদিনা পাতার ব্যবহারে দ্রুত ফল পেতে পারেন। পুদিনা পাতার গন্ধ ছারপোকা সহ্য করতে পারে না।
পুদিনা পাতা দিয়ে ছারপোকা তাড়াতে হলে প্রথমে একটি জালের ব্যাগে কিছু পুদিনা পাতা নিয়ে পুটলি করতে হবে। এরপর ছারপোকার আবাস্থল চিহ্নিত করে সেখানে পুটলিগুলি রেখে দিতে হবে। কিছুদিন পর পুদিনা পাতা শুকিয়ে সেখান থেকে তীব্র গন্ধ বের হতে থাকবে। এই গন্ধ ছারপোকা সহ্য করতে না পেরে বসা থেকে বিদায় নিবে।
কীটনাশকের ব্যবহারঃ অতি প্রাচীনকাল থেকেই ছারপোকা তাড়ানোর উপায় কি হিসেবে প্রাকৃতিক কীটনাশকের ব্যবহার করা হচ্ছে। ছারপোকা তাড়াতে ডায়াটোমেসিয়াস আর্থ কীটনাশক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এই কীটনাশকটি যেমন ছারপোকা তাড়াতে সাহয্য করে তেমনি শরীরের কোন ক্ষতি করে না।
এই কীটনাশক দিয়ে ছারপোকা তাড়াতে হলে যেসব স্থানে ছারপোকা থাকে যেমন বিছানা,ঘরের কোনা, সোফা, বুকসেলফ ইত্যাদি জায়গায় পাতলা করে কীটনাশকটি সিটিয়ে দিতে হবে। ছারপোকা যখন কীটনাশকের সংস্পর্শে আসবে এর রাসায়নিক ক্রিয়ার কারনে ছারপোকা মারা যাবে।
ছারপোকা দমনের ঔষধ
ছারপোকা দমনের জন্য বাজারের বিভিন্ন প্রকারের ঔষুধ পাওয়া যায়। আপানারা যারা ছারপোকা দমনের ঔষুধ খোঁজেতেছেন তাদের জন্য নিচের ঔষুধগুলি কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
গ্যাস ট্যাবলেটঃ ছারপোকা তাড়ানোর উপায় হিসেবে Aluminium Phosphide গ্যাস ট্যাবলেট ব্যবহার করা হয়। সাধারনত বাজারের যে সব দোকানে সার, বীজ কীটনাশক বিক্রি করে সেই দোকান থেকে এই ট্যাবলেট সংগ্রহ করতে হবে। বাসাবাড়ির যে সকল জায়গায় ছারপোকা বাসা বেধেছে সেখানে এই ট্যাবলেট রেখে দিলে ছারপোকা মারা যাবে।
ZoomX ছারপোকার ঔষধঃ ZoomX ঔষুধের পাউডার গুঁড়ো ছারপোকা তাড়ানোর উপায় হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ZoomX ওষুধ গুঁড়ো করে ছারপোকা চলাচলের রাস্তায় রেখে দিতে হবে। ছারপোকা চলাচলের সময় এই গুঁড়া গায়ে লেগে যাবে পাশাপাশি অন্যান্য ছারপোকার সাথে মিশে তাদের শরীরে লেগে যাবে। এর ফলে অল্প কয়েকদিনের মধ্যে ছারপোকা মরে যাবে।

এই ঔষুধের সম্পূর্ণ ফলাফল পেতে হলে ১০ দিন অন্তর অন্তর মাসে তিনবার ব্যবহার করতে হবে। আমাদের দেয়া নিয়ম অনুযায়ী এই ঔষুধ ব্যবহার করলে আপানার বাসা থেকে চিরতরে ছারপোকা বিলীন হয়ে যাবে।
ছারপোকা তাড়ানোর স্প্রে
ছারপোকা তাড়ানোর জন্য ঘরে বসেই ছারপোকা তাড়ানোর স্প্রে তৈরি করতে পারবেন। ছারপোকার অত্যাচার থেকে চিরতরে মুক্তি পেতে স্প্রের বিকল্প নেই। ঘরের ব্যবহার্য জিনিস থেকেই এই স্প্রে তৈরি করা যায়। নিচে কয়েকটি স্প্রের নাম ও এদের ব্যবহাবিধি নিয়ে আলোচনা করা হলঃ
কেরোসিন স্প্রে
বাড়ি থেকে চিরতরের ছারপোকা দূর করার উপায় হিসেবে কেরোসিনের স্প্রের ব্যবহার করা হয়ে থাকে। স্প্রে মেশিনের সাহায্যে ছারপোকার আবাসস্থলে কেরোসিনের স্প্রে দিলে ছারপোকা মারা যায়। কোরোসিনের স্প্রে খাটের ফাকে ফাকে দিলে বিছানা থেকে ছারপোকা দূর হয়ে যাবে। এছাড়াও সোফাসেটের কাঠের ফাকে ফাকে এই স্প্রে দিলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
ডিটারজেন্ট স্প্রে
ডিটারজেন্ট পাউডারে ক্ষার জাতীয় রাসায়নিক দ্রব্য থাকায় ছারপোকা সহজেই মারা যায়। যে কোন ডিটারজেন্ট পাউডার যেমন সার্ফেক্সেল, হুইল বা রিন পাউডার ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে মেশিনের সাহায্যে স্প্রে করতে হবে। কয়েকদিন পর পর এই স্প্রে ব্যবহার করলে দ্রুত ছারপোকা মরে যাবে।

ছারপোকা তাড়াতে নিম পাতা
ছারপোকা মারতে বিছানার চারপাশে নিম পাতা রাখতে পারেন। নিম পাতার দ্রবণ তৈরি করে স্প্রে করতে পারলে আরো ভালো হয়। এটি সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার করুন। নিমের তেলও ব্যবহার করা যেতে পারে।
ল্যাভেন্ডার অয়েল স্প্রে
ছারপোকার দমনে ল্যাভেন্ডার অয়েল স্প্রে অধিক কার্যকরী স্প্রে। বাসা বাড়ির যেখানে ছারপোকার বসবাস সেখানে ল্যাভেন্ডার অয়েল স্প্রে করতে হবে। ল্যাভেন্ডার অয়েলের গন্ধ ছারপোকা সহ্য করতে পারে না। ল্যাভেন্ডাতর অয়েল ২ থেকে ৩ দিন স্প্রে করলে ছারপোকা চলে যাবে।
ছারপোকা কামড়ালে কি হয়
ছারপোকা মানুষ ও উষ্ণ রক্তবিশিষ্ট অন্যান্য প্রাণীর রক্ত খেয়ে বেঁচে থাকে। বিছানায় ছারপোকা বেশি দেখা গেলেও ছারপোকার অন্যতম পছন্দের জায়গা হল ম্যাট্রিক্স , সোফা ও আসবাবপত্র। নিশাচর প্রাণী না হলেও রাতে অধিক সক্রিয় হয়ে মানুষের রক্ত চোষে খায়। এভাবে দীর্ঘদিন যদি ছারপোকা রক্ত চোষে খায় তাহলে নানাবিধ জটিল রোগের দেখা দিতে পারে।

ছাড়পোকা কামড়ালে শুরুতে ত্বকে ফোসকা পড়ে। পরে আক্রান্ত জায়গায় চুলকানিসহ বিভিন্ন ধরনের স্কিন ডিজিজ দেখা দেয়। এই ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কয়েদিন সময় লাগতে পারে।
সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক জার্নালের গবেষণার মাধ্যমে জানা গেছে নিয়মিত ছারপোকার কামড়ালে শরীরের কর্মক্ষতা কমে যাওয়ার পাশাশি ও অন্যান্য জটিল রোগের দেখা যায়। এমনকি আক্রান্ত ব্যক্তির আয়ুও কমে যেতে পারে।
- আরও পড়ুনঃ মেছতা দূর করার ক্রিম এর নাম ও ব্যবহার
চিরতরে ছারপোকা দূর করার উপায়
আপনি যদি আপনার বাসা থেকে চিরতরে ছারপোকা দূর করার উপায় জানতে চান তাহলে আমাদের পরামর্শ থাকবে আপনার ঘর বাড়ি সব সময় পরিষ্কার রাখার। বাড়ি থেকে ছারপোকা চলে যাওয়ার পরও নিয়মিত বালিশ, বিছানা, সোফা ও অন্যান্য আসবাবপত্র রোদে শুকাতে হবে। সম্ভব হলে গরম পানি দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
ছারপোকা তাড়ানোর উপায় কি নিয়ে শেষকথাঃ
ছারপোকা তাড়ানোর উপায় কি কি গুলোর মধ্য থেকে প্রাকৃতিক উপায়ে ছারপোকা তাড়ানোই উত্তম হবে। প্রাকৃতিকভাবে ছারপোকা তাড়াতে যে সব জায়গায় ছারপোকা বাসা বেধেছে সে সব জায়গা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। গরম পানি দিয়ে ছারপোকার আবাস্থল পরিষ্কার করতে পারলে অনেক উপকারে আসবে। আর যদি পানি ব্যবহার করা সম্ভব না হয় তাহলে সূর্যের উচ্চতাপে শুকিয়ে ছারপোকা দমন করা সম্ভব হবে।