বাচ্চাদের চোখের ড্রপের নাম, বাচ্চাদের চোখ উঠার ড্রপ ও শিশুর চোখে কেতুর হলে করণীয়

অনেক সময় ভাইরাস , ব্যাকটেরিয়া ও এলার্জির কারনে বাচ্চাদের চোখ উঠা ও চোখ লাল হয়ে যাওয়াসহ নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়। এই সমস্যা সমাধানে বাচ্চাদের চোখের ড্রপের নাম জেনেই ব্যবহার করা শুরু করে দেই । কিন্তু চোখের ড্রপ ব্যবহারে কিছু নিয়ম ও সতর্কতা রয়েছে ।
তাই আজকের আর্টিকেলটিতে বাচ্চাদের চোখের ড্রপের নাম ,বাচ্চাদের চোখ উঠার ড্রপশিশুর চোখে কেতুর হলে করণীয় এবংচোখের ড্রপ ব্যবহারের নিয়ম ও সতর্কতা বিস্তারিত আলোচনা করব । তাই এই সম্পর্কে জানতে ধৈয্যসহকারে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন ।

বাচ্চাদের চোখের ড্রপের নাম
বাচ্চাদের চোখে ব্যবহার করার জন্য বাজারের বিভিন্ন কোম্পানীর ড্রপ পাওয়া যায় । সবচেয়ে ভাল ও ব্যবহৃত বাচ্চাদের চোখের ড্রপের নাম নিচে দেয়া হলঃ
- ক্লোরোফেন
- অপটিমক্স
- ক্লোরামফেনিকল
- টোব্রেক্স
- সালফেসেটামাইড
- ক্লোরামফেনিকল
- ফ্লোকসাল
বাচ্চাদের চোখ উঠার কারণ
বাচ্চাদের চোখ উঠার পেছনে অনেকগুলো কারন রয়েছে। বাচ্চাদের চোখ উঠার ড্রপ সম্পর্কে জানার পূর্বে চোখ উঠার কারণ সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। কেননা এই কারণগুলি জানা থাকলে চোখ উঠার আগেই সর্কত হওয়া সম্ভব । তাই নিচে বাচ্চাদের চোখ উঠার কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ আলোচনা করছি যাতে আপনার বাচ্চার চোখ উঠা প্রতিরোধে সঠিক ব্যবস্থা নিতে পারেন।
- ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া জনিত কারণেঃ বেশির ভাগ সময় বাচ্চাদের ভাইরাস ও ব্যাক্টেরিয়ার ফলে চোখ উঠে থাকে । যদি চোখ লাল হওয়া , শুধু জ্বালাপোড়া করে তাহলে বুঝতে হবে আপনার বাচ্চার ভাইরাস জনিত কারনে চোখ উঠেছে । আবার যদি আপনার বাচ্চার চোখে জ্বালাপোড়া করে ও জ্বালাপোড়ার পাশাপাশি ময়লা আসে ,চোখে কেতুর জমে তাহলে বুঝতে হবে ব্যাক্টেরিয়া জনিত কারনে চোখ উঠেছে ।এক্ষেত্রে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া বিরুদ্ধে কার্যকরী বাচ্চাদের চোখ উঠার ড্রপ রয়েছে তা ব্যবহার করতে হবে।
- চোখে অতিরিক্ত পরিমাণ ধুলাবালি পড়লেঃ বাচ্চারা বেশিরভাগ সময় ধুলাবালিতে খেতে পছন্দ করে। এর ফলে খেলতে খেলতে চোখে ধুলাবালি লেগে যায় চোখ ঘসতে থাকে।এতে চোখ আস্তে আস্তে লাল হয়ে যায় । চোখ দিয়ে মায়লা আসে , কেতুর জমে । তাই চোখে ধুলাবালি পড়লেও চোখ উঠতে পারে।
- আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে মাধ্যমেঃ চোখ উঠা ছোঁয়াচে রোগ । এ রোগটি যদি ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার ফলে হয় তাহলে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শের মাধ্যমে চোখ উঠতে পারে । তাই আক্রান্ত ব্যক্তি খেতে বাচ্চাকে দূরে রাখতে হবে। এর পাশাপাশি আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহার্য জিনিসপত্র ব্যবহার করতে নিষেধ করতে হবে।
- মৌসুমী আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণেঃ মৌসুমি আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে বাচ্চারা নতুন আবহাওয়ার নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে পারে না । মৌসুমি আবহাওয়ায় চোখ উঠাসহ আরও নানা রোগের আক্রান্ত হতে পারে ।এক্ষেত্রে বাচ্চাদের চোখ উঠার ড্রপ ব্যবহার করলে ভাল উপকার পাওয়া যায় ।
- এলার্জির কারণেঃ
যে সকল বাচ্চাদের ডাস্ট এলার্জি তারা হাল্কা ধুলাবালিতে খেলেই চোখ লাল হয়ে যায় । এরপর আস্তে আস্তে চোখ উঠে ।
- চোখে আঘাতজনিত কারণেঃ বাচ্চারা খেলতে খেলতে অনেক সময় খেলার জিনিস দিয়ে আঘাত পেয়ে যায় অথবা বন্ধুদের সাথে হাতাহাতির এক পর্যায়ে চোখে আঘাত পেতে পারে। এতে চোখ ফুলে লাল হয়ে যায় । তাই চোখ উঠার জন্য চোখে আঘাতজনিত কারণ অন্যতম কারন হিসেবে ধরা হয়। এতে ভয় না পেয়ে বাচ্চাদের চোখ ওঠার ড্রপ ব্যবহার করলে ভাল উপকার পাওয়া যায়।
আরও পড়ুনঃ শিশুর নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ, প্রতিকার, চিকিৎসা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
চোখ ওঠার লক্ষণ
পূর্বে আমরা বাচ্চাদের চোখ উঠার কারণ সম্পর্কে জেনেছি । এবার আমারা চোখা ওঠার লক্ষণ দেখেই নিশ্চত হয়ে বাচ্চাদের চোখের ড্রপের নাম জেনে তা ব্যবহার করব । চলুন তাহলে চোখ উঠার লক্ষণগুলি জেনে নেইঃ
- প্রথমে চোখের সাদা অংশ লাল টকটকে দেখাবে ।
- এক চোখ আক্রান্ত হলে অন্য চোখও আক্রান্ত হবে।
- চোখে কেতুর বা পিচুটি জমতে থাকবে।
- চোখ ব্যাথা করবে।
- চোখ জ্বালাপোড়া করবে ।
- মাঝে মাঝে চোখের পাতা ফুলে লাল হয়ে বন্ধ হয়ে যেতে পারে ।
- চোখে চুলকানি হবে ।
- দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসতে পারে।
বাচ্চাদের চোখ উঠার ড্রপ
বর্তমান সময়ে বাচ্চাদের চোখ উঠা সবচেয়ে বড় সমস্যার মধ্যে একটি । সাধারনত বড়দের চোখ উঠলে এমনিতে কয়েকদিন পর সেরে যায় । কিন্তু বাচ্চাদের চোখ উঠলে তারা বেশিদিন এর যত্ননা সহ্য করতে পারে না। তাই বাধ্য হয়ে বাচ্চাদের চোখ উঠার ড্রপ ব্যবহার করা হয় । বাচ্চাদের চোখ উঠার চিকিৎসা হিসেবে অপটিমক্স, ট্রবব্রেক্স, ক্লোরামফেনিকল ইত্যাদি ড্রপ ব্যবহার করা যেতে পারে ।
এই ড্রাপগুলি চোখ উঠার পাশাপাশি চোখের অন্যান্য সমস্যার সমাধানে ব্যবহার করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে চক্ষু ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ব্যবহার করতে হবে।
চোখে ড্রপ ব্যবহারের নিয়ম
বাচ্চাদের চোখে ড্রপ ব্যবহারের নিয়ম এ মানুষ যে ভুলটি করে থাকে তা হল তাড়াহুড়া করা । চোখে শুধুমাত্র একটি ড্রপ নেয়ার ধারণ ক্ষমতা থাকে । এর চেয়ে বেশি দিলে সেটা চোখ থেকে বের হয়ে মুখ বেয়ে গরিয়ে পড়ে তাই একেবারে কয়েক ফোটা দেয়ার অর্থ হচ্ছে আপনি চোখের ড্রাপ অপচয় করছে। যেমন ধরুন আপনার ডাক্তার যদি আপনাকে ৬ ঘণ্টা পর পর চার ফোটা করে ড্রপ দিতে বলে তার অর্থ এই নয় যে একেবারে চার ফোটা একত্রে আই ড্রপ ব্যবহার করবেন।
তাই আই ড্রপ কয়েক ফোটা ব্যবহারে নির্দেশনা থাকলেও সময় নিয়ে আস্তে আস্তে ব্যবহার করুন । এখন আমরা জনাব কিভাবে চোখের ড্রপ ব্যবহার করতে হয়।
- বাচ্চাদের চোখের ড্রপ ব্যহারের প্রথমেই বাচ্চাদের চোখের ড্রপের নাম জেনে ব্যবহার করুন
- চোখের ড্রপ ব্যবহারের ক্ষেত্রে ড্রপের প্যাকেটে ব্যবহারের দিনটি লিখে রাখতে হবে। কারন চোখের ড্রপের মুখ খোলার পর তা ১ মাসের মধ্যে ব্যবহার করা উচিত ।
- প্রথমে আই ড্রপ ব্যবহারে ক্ষেত্রে রোগীর মাথা সামান্য পেছনে নিয়ে চোখের উপরের পাতা তুলে ধরুন এবং প্রত্যেক চোখে এক ফোটা করে আই ড্রপ ব্যবহার করুন এবং চোখটি ১০সেকেন্ড এর মত বন্ধ রাখুন ।
- এরপর চোখের কোনায় হাত দিয়ে চেপে ধরুন যাতে আই ড্রপ নাকের মধ্যে প্রবেশ না করে ।
- আইড্রপ এবং আই অয়েনমেন্ট যদি এক সাথে ব্যবহার করতে হয় তাহলে প্রথমে আই ড্রপ ব্যবহার করুন তারপর আইঅয়েনমেন্ট ব্যবহার করুন ।
বাচ্চাদের চোখে ড্রপ ব্যবহারে বাড়তি কিছু সতর্কতাঃ
- চোখে আইড্রপ ব্যবহারের সময় খেয়াল রাখুন ড্রপটি যেন সরাসরি কর্ণিয়ার উপর না পড়ে।
- চোখে আইড্রপ ব্যবহারের ফলে যদি চোখে জ্বালাপোড়া হয় তাহলে ড্রপটি দেয়া বন্ধ রাখতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিন ।
শিশুর চোখে কেতুর হলে করণীয়
আমাদের দেশের শতকরা ছয়জন বাচ্চার চোখ থেকে পানি পড়ে । এর পাশাপাশি চোখ দিয়ে কেতুর আসে । তবে ইদানীং এই রোগটি খুব বেশি দেখা যাচ্ছে । সঠিক সময়ে এর যদি সঠিক চিকিৎসা করা না হয়, তবে নানা ধরনের জটিলতায় শিশুর দৃষ্টির ক্ষতি হতে পারে। তাই শিশুর চোখে কেতুর হলে করণীয় হিসেবে দুটি পন্থা আছে । নিচে চোখে কেতুর হলে করণীয় পন্থাগুলি বিস্তারিত আলোচনা করা হলঃ
১) চোখ পরিষ্কার করাঃ
চোখ পরিষ্কার করার জন্য উষ্ণ গরম পানিতে বেবি ওয়েল মিশিয়ে কাপড় বা তুলা ভিজিয়ে নিতে হবে।এই ভেজা কাপড় বা তুলা দিয়ে চোখ বার বার মুছতে হবে। কাপড় ব্যবহার করার ক্ষেত্রে কাপড়টি অব্যশই নরম সুতি হতে হবে। চোখের চারদিকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। এই কাজটি দিনে কয়েকবার করতে হবে। আর বাচ্চার চোখে কোন প্রকার কাজল বা এ জাতীয় জিনিস ব্যবহার করা যাবে না। চোখ সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে।

আরও পড়ুনঃবাচ্চাদের সর্দি কাশির ঔষধের নাম ও বাচ্চাদের কাশির সিরাপ 2022
২) চোখ মাসেজ করাঃ
হাত দিয়ে চোখের কোনায় হাল্কা ম্যাসেজ করে নাক দিয়ে টেনে নিয়ে আসতে হবে। এই কাজটি দিনে ৩ থেকে ৪ বার করে করতে হবে। নিচে ম্যাসেজ এর ছবি দেয়া হলঃ

এরপর যদি আপনার শিশুর চোখের কেতুর আসতে থাকে তাহলে অব্যশই ডাক্তার দেখাবেন। ডাক্তার চোখের ড্রপ দিবেন অথবা বেশি জটিল হলে অপারেশন এর পরামর্শ দিবেন । এক্ষেত্রে আপনি ইস্পাহানী ইসলামিয়া চক্ষু ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল এর ডাক্তার দেখাতে পারেন ।
মন্তব্যঃ
আজকের এই আর্টিকেলটিতে বাচ্চাদের চোখের ড্রপের নাম ,বাচ্চাদের চোখ উঠার ড্রপ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনার চেষ্টা করেছি। সেই সাথে চোখ ওঠার লক্ষণ , চোখে ড্রপ ব্যবহারের নিয়ম , শিশুর চোখে কেতুর হলে করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত ধারনা দেয়া চেষ্টা করেছি ।
আজকের আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনাদের বন্ধু অথবা প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। আর বাচ্চাদের চোখের ড্রপের নাম , বাচ্চাদের চোখ উঠার ড্রপ সম্পর্কে যদি কোনো পরামর্শ বা প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে লিখে জানাবেন আমারা আপনাদের সকল প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করব ।