ইন্টারনেট

কম্পিউটার ভাইরাস কি? ১০টি কম্পিউটার ভাইরাসের নাম,লক্ষণ ও প্রতিরোধ

সুপ্রিয় পাঠক/ পাঠিকা! কম্পিউটার ভাইরাস কি? কম্পিউটারের ক্ষতিকর ভাইরাসের নাম ও তার তালিকা সম্পর্কে জানতে চান ? তাহলে আজকের ফিচার পোষ্টটি আপনার জন্য। আপনি যদি ভাইরাস আক্রমনের লক্ষণ, কারণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান, তাহলে সম্পূর্ণ লেখাটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

কম্পিউটার ভাইরাস কি?

বর্তমান সময়ে বিশ্বের প্রতিটি কাজই কম্পিউটার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। তাই এই তথ্য ও প্রযুক্তির যুগে আমাদের প্রতিনিয়তই কম্পিউটারের ব্যবহার করতে হয়। মানবদেহ যেমন রোগ জীবানু দ্বারা আক্রমিত হয় তেমনি কম্পিউটারও এক ধরনের ভাইরাস দ্বারা আক্রমিত হয়। এই ধরনের ক্ষতিকর ভাইরাসগুলোকে কম্পিউটার ভাইরাস বলা হয়ে থাকে।

কম্পিউটার ভাইরাস কি ১০টি কম্পিউটার ভাইরাসের নাম,লক্ষণ ও প্রতিরোধ
কম্পিউটার ভাইরাস কি

কম্পিউটার একটি হিসাব গণনাকারী যন্ত্র যা কতগুলো কম্পিউটার প্রোগ্রাম নির্দেশমালা অনুসরণ করে পরিচালিত হয়। এই প্রোগ্রামকে ধ্বংস করার জন্য এক ধরণের ভাইরাস কাজ করে যা ব্যবহারকারীর অনুমতি ছাড়া নিজে নিজেই তার প্রতিরূপ সৃষ্টি করতে পারে। এদের প্রধান কাজ হচ্ছে কম্পিউটার প্রোগ্রাম ধ্বংস করা, ফাইল মুছে ফেলা বা হার্ড ডিস্ক পূণর্গঠন ইত্যাদির মাধ্যমে সম্পূর্ণ কম্পিউটারকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া।

প্রোগ্রামারা কম্পিউটার প্রোগ্রাম ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের কম্পিউটার তৈরি করে। তেমনি কিছু অসাধু ব্যক্তি তাদের খারাপ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য প্রোগ্রাম দ্বারা ভাইরাস তৈরি করে থাকে। এই ভাইরাস কম্পিউটারের সফটওয়ারের ক্ষতি এমনকি সমস্ত কম্পিউটারকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিতে পারে।

অনেক সময় দেখা যায়, এ সব অসাধু ব্যক্তিরা অন্যের কম্পিউটারকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বিশাল অংকের টাকা দাবি করে। কিন্তু আপনি যদি পূর্বে থেকেই কম্পিউটার ভাইরাস কি এবং কিভাবে এর থেকে কম্পিউটারকে রক্ষা করা যায়। এই সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান রাখেন তাহলে অতি সহজেই এর থেকে পরিত্রান পেতে পারবেন।

কম্পিউটার ভাইরাস আবিষ্কারের ইতিহাস

পূর্বে ভাইরাস শব্দটি জীববিজ্ঞান কিংবা মানবদেহের সাথে সম্পর্কযুক্ত শব্দ হিসেবে ব্যবহার করা হত। কিন্তু বর্তমান সময়ে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস কম্পিউটার, স্মার্টফোন, পেনড্রাইভ ইত্যাদির সাথে যুক্ত হয়ে গেছে। আপনার যারা কম্পিউটার ব্যবহার করেন, তাদে কাছে কম্পিউটার ভাইরাস একটি অতি সুপরিচিত শব্দ।

VIRUS প্রকৃতপক্ষে কয়েকটি শব্দের সংক্ষিপ্ত রুপ। VIRUS শব্দটি পূর্ণরুপ হলোঃ Vital Information Resources Under Seiz। এর পূর্ণরুপের মধ্যেই কম্পিউটার ভাইরাস কি ও তার পরিচয় লুকিয়ে রয়েছে। ১৯৮৩ সালের ১০ ই নভেম্বর সর্বপ্রথম কম্পিউটার ভাইরাস আবিষ্কৃত হয়। যুক্তরাষ্ট্যের সাউদার্ন ক্যালিফরনোনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ের ছাত্র ফ্রেড কোহেন তা আবিষ্কার করেন।

কম্পিউটার ভাইরাস আবিষ্কারের ইতিহাস
কম্পিউটার ভাইরাস আবিষ্কারের ইতিহাস

ফ্রেড কোহেন পেন্সিল ভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বিষয়ক এক সেমিনারে কম্পিউটারের ভাইরাস প্রদর্শন করেন। তিনি তার তৈরিকৃত প্রোগ্রামকে একটি মেইন ফ্রেম কম্পিউটারে প্রবেশ করিয়ে অতি অল্প সময়ের মধ্যে সম্পূর্ণ কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন। তার এই তৈরিকৃত ভাইরাসটি নিজে থেকে নিজের অনুলিপি তৈরি করতে পারত। সেই থেকে কোহেনের উদ্ভাদিত প্রোগ্রামটির নাম কম্পিউটার ভাইরাস নামে পরিচিতি পেতে থাকে।

তবে অনেকে মনে করেন কম্পিউটার ভাইরাস অনেক আগেই আবিষ্কৃত হয়েছে। তাদের মতে রিচকিয়েন্টা নামক এক যুবক ১৫ বছর বয়সে বন্ধুদের সাথে মজা করার জন্য একটি প্রোগ্রাম আবিষ্কার করেন। যা ফ্লোফিডিস্কের মাধ্যমে কম্পিউটারকে সংক্রমিত করতে সক্ষম।

আবার কেউ কেউ মনে করেন, ১৯৭০ সালের প্রথম দিকে রবার্ট থমাস কম্পিউটার ভাইরাস আবিষ্কৃত করেন। যার নাম ছিল ক্লিপার। এই ভাইরাসটিও নিজে থেকে নিজের অনুলিপি তৈরি করতে পারতো। তবে এই ভাইরাসটি পরীক্ষামূলক ছিল বলে ধারাণা করা হয়।

কম্পিউটার ভাইরাস কত প্রকার

বিশ্বে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ভাইরাসের সৃষ্টি হচ্ছে। এই ভাইরাস শুধু মানবদেহকে নয় কম্পিউটার বা স্মমার্টফোন মত প্রায় সকল ইলেকট্রিক ডিভাইসকে আক্রমণ করছে। এই ভাইরাসগুলি এক নিমিষে আপনার কম্পিউটার বা স্মার্টফোনকে বিকল করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।

যেহেতু প্রতিটি ভাইরাসের আকার, আকৃতি ও বৈশিষ্ট্য ভিন্ন হয়ে থাকে। সেহেতু তাদের আক্রমণ ও ক্ষয় ক্ষতির ধরণও অনেকটাই ভিন্ন হয়ে থাকে। তাই এদের সঠিক প্রকারভেদ নির্ণয় করাও মুশকিল। তবে এদের কাজের ভিত্তিতে অতি সহজে পার্থক্য নির্ণয় করা সম্ভব।

প্রিয় পাঠক, আজকে আমরা কম্পিউটার ভাইরাসের প্রকারভেদ ও কি কি নিয়ে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। সাধারণত কাজের ভিত্তিতে কম্পিউটার ভাইরাসকে ২ ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে।

  • নিবাসী ভাইরাস (Resident Virus)
  • অনিবাসী ভাইরাস (Non-Resident Virus)

নিবাসী ভাইরাসঃ সাধারণত নিবাসী ভাইরাস সক্রিয় হয়ে কম্পিউটার বা স্মার্টফোনের মেমোরিতে দীর্ঘস্থায়ীভাবে বসে থাকে। তাই কম্পিউটারে যখনই কোন নতুন প্রোগ্রাম চালু হয়, সাথে সাথে সেই প্রোগ্রামকে সংক্রমিত করে। এই ধরণের ভাইরাস দ্বারা কম্পিউটার সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

অনিবাসী ভাইরাসঃ এই ধরনের ভাইরাসগুলি সক্রিয় হওয়ার পর অন্য প্রোগ্রামগুলোকে সংক্রমন করার জন্য খুঁজতে থাকে। এরপর সেগুলোকে সংক্রমণ করে মূল প্রোগ্রামের কাছে নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তর করে।

কম্পিউটার ভাইরাসের নাম

কম্পিউটার ভাইরাস একধরণের প্রোগ্রাম। এই প্রোগ্রাম কম্পিউটারের সাধারণ কার্যকালাপকে বাধা দিয়ে থাকে। ফলে কম্পিউটার নানা ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এই ক্ষতির সম্মুখীনের উপর ভিত্তি করে কম্পিউটার ভাইরাসের নাম হচ্ছেঃ

বুট সেক্টর ভাইরাস
এই ধরণের ভাইরাসগুলি ফ্লপি বা হার্ড ডিক্সের বুট সেক্টরকে আক্রমন করে। বুট সেক্টের মধ্যস্থ মাস্টার বুট প্রোগ্রামটিকে নষ্ট করে দেয়। এর ফলে সিস্টেমটিকে বুট হতে বাধা দেয়। উদাহরণঃ Friday13, Stone Virus, Disk killer । প্রথম বুট সেক্টর ভাইরাসের নাম Brain।

ফাইল বা প্রোগ্রাম ভাইরাস
এই ভাইরাসগুলি কম্পিউটার ও সফটওয়্যার সিস্টেম ফাইল যেমনঃ .exe, .com, .sys ইত্যাদি ফাইলগুলি নষ্ট করে দেয়। উদাহরণঃ- Cascade, Acid Rain, Sunday, Trojon

ফ্যাট ফাইরাস
এই ভাইরাসগুলি ডিক্স মধ্যস্থ FAT কে আক্রান্ত করে ডিরেক্টরীর ভেতরের কোন ফাইলের তথ্য বা পুরো ডিরেক্টরীর সমস্ত ফাইল নষ্ট করে দেয়। উদাহরণঃ Link Virus।

কম্পিউটার ভাইরাসের নাম
কম্পিউটার ভাইরাসের নাম

রেসিডেন্ট ভাইরাস
এই ভাইরাসগুলি কম্পিউটারের প্রধান মেমোরীকে আক্রমন করে সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করে মেমোরী দখল নেয়। ফাইল Corrupt করে দেয় এবং সিস্টেমের কাজ বাধাপ্রাপ্ত হয়। এর ফল স্বরুপ ফাইল খোলা, বন্ধ করা, কপি করা, রি- নেম করা ইত্যাদির কাজ বাধা প্রাপ্ত হয়। উদাহরণঃ CMJ, Randex।

ম্যাক্রো ভাইরাস
যে সকল অ্যাপ্লিকেশান বা প্রোগ্রাম ফাইলগুলি মধ্যে ম্যাক্রো বর্তমান সেই সব অ্যাপ্লিকেশান বা প্রোগ্রাম এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়। ম্যাক্রো ভাইরাস দ্বারা উক্ত প্রোগ্রামগুলি সংক্রমিত হলে সেগুলির কাজে বিঘ্ন ঘটে বা ফাইলগুলি সংক্রমিত হলে সেগুলির কাজে বিঘ্ন ঘটে বা ফাইলগুলি নষ্ট হয়ে যায়। উদাহরণঃ y2K, Relax, W97M, DVM ।

মাল্টিপারশিয়েট ভাইরাস
এই ধরণের কম্পিউটার ভাইরাস কম্পিউটারের মাল্টিপল অবজেক্টকে আক্রান্ত করে। কম্পিউটারে যখন এই ভাইরাসের exe ফাইল রান করা হয় তখন বুট রকর্ড থেকে রান হয়ে মেমোরির রেসিডেন্টে অবস্থান করে। এর ফলে মেমোরির রেসিডেন্ট exe ফাইলসমূহকে আক্রান্ত করে ফেলে। এই ধরণের ভাইরাস সাধারণত com, exe এবং MBRs এবং ডিভাইস ড্রাইভারসমূহকে আক্রান্ত করে। উদাহরনঃSobig, Melissa, Conficker, Stuxnet ।

পলিমর্ফিক ভাইরাস
পলিমর্ফিক ভাইরাস হচ্ছে কম্পিউটারের বহুরুপী ভাইরাস। এই ভাইরাস কম্পিউটারে প্রবেশের পর প্রতিনিয়ত এদের কোডের পরিবর্তন করতে থাকে। এই সময় সার্কিউলেশনের মাধ্যমে তথ্য চুরি করে নিয়ন্ত্রকের কাছে পৌঁছে যায়। সাধারণ এন্টি ভাইরাস দিয়ে এদের নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। উদাহরণঃ CIH, Chernobyl, Dark Avenger, Stuxnet।

স্টেলথ ভাইরাস

এই ধরনের ভাইরাস তাদেরর সনাক্তকরণ এড়াতে বিভিন্ন ধরণের কৌশল ব্যবহার করে থাকে। এরা অপারেটিং সিস্টেমের প্রয়োজনীয় ফাইল বা প্রোগ্রামের মধ্যে উপস্থিত হয়ে অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রামগুলিকে নষ্ট করার চেষ্টা করে। এই ধরণের কম্পিউটার ভাইরাসের নাম হচ্ছে whole virus।

১০টি কম্পিউটার ভাইরাসের নাম

প্রতিনিয়তই নতুন নতুন কম্পিউটার ভাইরাস আবিষ্কার হচ্ছে। এসব কম্পিউটার ভাইরাস তথ্য চুরি করা ছাড়াও সম্পূর্ণ কম্পিউটারকে নষ্ট করে দিতে পারে। নিচে বহুল পরিচিত ১০ টি কম্পিউটার ভাইরাসের নাম দেওয়া হল।

১. ক্রিপ্টোলকার (Cryptolocker)

২. স্টর্ম ওয়ার্ম (Storm Worm)

৩. স্যাসার ও নেটস্কাই (Sasser & Netsky)

৪. মাইডুম (MyDoom)

৫. এস কিউ এল স্ল্যামার

৬. নিমডা (Nimda)

৭. কোড রেড ও কোড রেড-২ (Code Red and Code Red II)

৮. দ্য ক্লেজ ভাইরাস (The Klez Virus)

৯. আইলাভইউ (ILOVEYOU)

১০. মেলিসা (Melissa)

কম্পিউটার ভাইরাস এর বৈশিষ্ট্য

পূর্বে আমারা কম্পিউটার ভাইরাস কি এই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। কম্পিউটার ভাইরাস মানবদেহের ভাইরাসের মত নয়। এটি একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম মাত্র। প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষ নানা জিনিস আবিষ্কার করলেও কিছু অসাধু ব্যক্তি তাদের খারাপ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য নানা ক্ষতিকর জিনিস আবিষ্কার করছে। এই কম্পিউটার ভাইরাস হচ্ছে তাদের মধ্যে অন্যতম উদাহরণ।

যেহেতু কম্পিউটার ভাইরাসগুলি জীবদেহের ভাইরাস থেকে অনেকটাই আলাদা। সেহেতু এদের আচার, আচরণ ও বৈশিষ্ট্যেও অনেক পার্থক্য রয়েছে। নিচে কম্পিউটার ভাইরাস এর বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করা হলঃ

১।কম্পিউটার ভাইরাসের প্রধান ও চিহ্নিতমূলক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি এক সিস্টেম থেকে অন্য সিস্টেমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এই ধরণের ছড়িয়ে পড়াকে ভাইরাসের প্রচার বলে গণ্য করা হয়। যা ব্যবহারকারীর ইচ্ছায় বা দূর্ঘটনাক্রমে হয়ে থাকে।

২। পুনরুৎপাদনক্ষমতা কম্পিউটার ভাইরাস এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য যা ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই নিজে নিজের পুনরুৎপাদন করতে পারে।

কম্পিউটার ভাইরাস এর বৈশিষ্ট্য
কম্পিউটার ভাইরাস এর বৈশিষ্ট্য

৩। এই ভাইরাস ছাড়াওনোর জন্য উপযুক্ত মাধ্যমের প্রয়োজন।  পেন ড্রাইভ, বহিরাগত হার্ড ডিস্ক বা একটি ফ্লপি ড্রাইভ ইত্যাদির মাধ্যমে কম্পিউটার ভাইরাস ছাড়াতে পারে। এছাড়াও অনেক সময় ইমেল সংযুক্তিগুলির মাধ্যমেও ভাইরাসের আক্রমণ ঘটতে পারে।

৪। ভাইরাস স্থায়ী ও অস্থায়ী উভয় ধরনের হতে পারে।

৫। সাধারণত সকল প্রকার ভাইরাসই ম্যালওয়্যার কিন্তু সকল ম্যালওয়্যার ভাইরাস নয়।

৬। ভাইরাসের কার্যক্ষমতার উপর ভিত্তি করে ক্ষতির পরিমাণ ভিন্ন হতে পারে।

কম্পিউটারে ভাইরাস প্রবেশের পথ

কম্পিউটারকে ভাইরাস আক্রমণ করার জন্য মাধ্যমের প্রয়োজন। ভাইরাস নিজে নিজেই একটি ভালো কম্পিউটারকে আক্রমণ করবে না। সাধারণত ইন্টারনেট, পেন ড্রাইভ, বহিরাগত হার্ড ডিস্ক বা একটি ফ্লপি ড্রাইভ ইত্যাদির মাধ্যম কম্পিউটারে ভাইরাস প্রবেশের পথ হিসেবে কাজ করে। তাই এক্সটার্নাল ড্রাইভ যেমনঃ পেনড্রাইভ, ডিভিডি, মোবাইল, মেমোরী কার্ড ল্যাপটপ কিংবা কম্পিউটারে প্রবেশর পূর্বে ভাইরাস স্ক্যান করে নিতে হবে। এতে খুব সহজেই আপনি আপনার কম্পিউটারকে ভাইরাস মুক্ত রাখতে পারবেন।

কম্পিউটার ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ

আপনাদের অনেকে প্রশ্ন করে থাকেন, কিভাবে বুঝব কম্পিউটার ভাইরাস দ্বার সংক্রমিত হয়েছে ? প্রিয় পাঠক আপনার কম্পিউটারটি ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয়েছে কি না এর লক্ষণ দেখে চিহ্নিত করতে পারবেন। চলুন তাহলে কম্পিউটার ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণগুলি জেনে নেইঃ

১। ঘনঘন পপাপ আসবে।

২। প্রোগ্রাম রান হতে অনেক বেশি সময় লাগবে।

৩। মেমোরি স্টোরেজে জায়গা কম দেখাবে।

৪। যে কোন ফাইল ওপেন হতে অনেক সময় লাগবে।

৫। অনেক সময় ফোল্ডার অপশন হাইড হয়ে যেতে পারে।

৬। কম্পিউটার সিস্টেমের দিন, তারিখ ও সময়ের পরিবর্তন হতে পারে।

৭। ইন্টারনেট স্পিড অপ্রত্যাশিতভাবে কমে যাবে।

৮। হার্ডওয়্যার বা সফটওয়্যারে নানা ধরনের ত্রুটি দেখাবে।

৯। সর্বোপরি কম্পিউটার অন বা অফ হতে অধিক সময় নিবে।

কম্পিউটার ভাইরাস কি কি ক্ষতি করতে পারে

প্রিয় পাঠক, কম্পিউটার ভাইরাসের ক্ষতিকর দিক বর্নণা করে শেষ করা যাবে না। যদি কোন কম্পিউটার শক্তিশালী ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয় তাহলে উক্ত কম্পিউটারকে সম্পূর্ণভাবে বিকল করে দিতে পারে। সাধারণত কম্পিউটার ভাইরাসের ছোট খাটো আক্রমণ তেমন বেশি ক্ষতি করে না। তবে কিছু উল্লেখযোগ্য ক্ষতিকর দিক রয়েছে যার মাধ্যমে সম্পূর্ণ কম্পিউটারটি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। চলুন তাহলে কম্পিউটার ভাইরাস কি কি ক্ষতি করতে পারে তার সংক্ষিপ্ত আকারে জেনে নেইঃ

১। যে কোন গুরুত্বপূর্ণ ফাইল মুছে দিতে পারে।

২। ধারণকৃত ডাটার সম্পূর্ণ বা আংশিক বিকৃতি ঘটাতে পারে।

৩। অনেক সময় হঠাৎ করে উলটো পালটা তথ্য দিতে পারে।

৪। মনিটরের ডিসপ্লেকে নষ্ট করে দিতে পারে।

৫। কম্পিউটারকে স্লো করে দিতে পারে।

৬। সম্পূর্ণ কম্পিউটারকে বিকল বা নষ্ট করে দিতে পারে।

কম্পিউটার ভাইরাস প্রতিরোধের উপায়

কম্পিউটার বা স্মার্টফোন নানাভাবে ক্ষতিকর ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হতে পারে। এই ভাইরাসের কারনে আপনার পছন্দের গ্যাজেটি বিকল হয়ে যেতে পারে। এছাড়াও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট, ফাইল বা ছবি মুছে দিতে পারে।প্রিয় পাঠক, আপনার যদি কম্পিউটার ভাইরাস প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান থাকে তাহলে এই ক্ষয় ক্ষতি অনেকাংশই কমানো সম্ভব। চলুন তাহলে ভাইরাস প্রতিরোধের উপায়গুলি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেইঃ

  • এন্টিভাইরাস ব্যবহার করাঃ- কম্পিউটারকে ভাইরাসের হাত থেকে নিরাপদের রাখার অন্যতম উপায় হচ্ছে এন্টিভাইরাস ব্যবহার করা। এন্টিভাইরাস কম্পিউটারকে যাবতীয় ক্ষতিকর ভাইরাস থেকে রক্ষা করে। সাধারণত এন্টিভাইরাসগুলি পেইনড্রাভ, সিডি বা ডিক্স আকারে থাকে। এরপর কম্পিউটারে পেনড্রাইভের মাধ্যমে কম্পিউটারে এন্টিভাইরাস ইন্সট্রল করতে হয়। নিচে কয়েকটি বহুল পরিচিত এন্টি ভাইরাসের নাম দেওয়া হলঃ

১। রিভ অ্যান্টিভাইরাস
২। কাসপারস্কি
৩। ম্যাকফি
৪। নরটন
৫। পিসিসিলিন
৬। এভিজি
৭। অ্যাভাস্ট

এই এন্টিভাইরাসগুলির মধ্যে যে কোন একটি কম্পিউটারে ইন্সটল করে স্ক্যান করে নিলে ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। প্রিয় পাঠক, আপনারা যারা Windows-10 বা Windows-11 ব্যবহার করেন তাদের আলাদা করে এন্টিভাইরাস ব্যবহার না করলেও চলবে। তবে কম্পিউটার ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনেক সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

  • ইন্টারনেট থেকে ফাইল ডাউনলোড করার সময় সর্তকতাঃ- প্রযুক্তির অন্যতম আবিষ্কার হচ্ছে ইন্টারনেট। ইন্টারনেট ছাড়া কম্পিউটার বা স্মার্টফোনের কথা কল্পনাই করা যায় না। এজন্য আমারা নানা প্রয়োজনে বিভিন্ন ধরণের ফাইল ডাউনলোড করে থাকি। কম্পিউটার ভাইরাস প্রতিরোধের উপায় হিসেবে ইন্টারনেট ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে। যে কোন ধরণে ফাইল বা ডকুমেন্ট ডাউনলোড করার সময় তার ভাইরাস চেক করে নিতে হবে।
  • সফটওয়্যার ডাউনলোডঃ- প্রিয় পাঠক, আপনাদের অনেক ইউটিউব বা বিভিন্ন মাধ্যমের সাহায্যে সফটওয়্যার ডাউনলোড করে থাকে। অনেক সময় এই ধরণের পাইরেটেড সফটওয়ারগুলিতে ক্ষতিকর ভাইরাস থাকতে পারে। তাই পাইরেটেড সফটওয়্যার ডাউনলোড করা থেকে বিরত থাকুন।

  • ফাইল ডাউনলোড করার আগে চেক করাঃ- অনলাইন কিংবা অফলাইনের কোন লিংক থেকে ফাইল ডাউনলোড করার আগে তা চক করতে হবে। অনেক সময় খারাপ লোকেরা ক্ষতিকর ভাইরাসের লিংক দিয়ে তা ডাউনলোড করতে বলে। তাই যেকোন ফাইল ডাউনলোড করার আগে তা ভাইরাস স্ক্যান করে নিতে হবে।
কম্পিউটার ভাইরাস প্রতিরোধের উপায়
কম্পিউটার ভাইরাস প্রতিরোধের উপায়
  • সন্দেহজনক ওয়েবসাইট এড়িয়ে চলাঃ- কিছু ওয়েবসাইট আছে যারা বিভিন্ন উপায়ে কম্পিউটার ব্যবহারকারীর তথ্য নিয়ে টাকা দাবি করে। এই ধরণের সন্দেহজনক ওয়েবসাইট এড়িয়ে চলতে হবে।
  • পপ এডস থেকে সাবধানঃ- প্রিয় পাঠক, আপনারা হয়তো লক্ষ্য করে থাকবেন কিছু ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার সাথে সাথে পপ এডস শো করে। অনেক সময় তাদের সাইটের আপডেট তথ্য পেতে কুকি এক্সেপ্ট করতে বলে। এই ধরণের পপ এডস থেকে সাবধান থাকতে হবে। এই কুকিগুলির মাধ্যমে আপনার কম্পিউটারে ভাইরাসের এটাক্ট হতে পারে। তাই কম্পিউটার ভাইরাস প্রতিরোধের উপায় হিসেবে পপ এডস থেকে সাবধান থাকতে হবে।
  • অপ্রয়োজনীয় লিংকে প্রবেশ থেকে বিরত থাকাঃ- প্রিয় পাঠক, আপনাদের পূর্বে বলেছি ভাইরাস বিভিন্ন মাধ্যমে আপনার কম্পিউটারকে সংক্রমিত করতে পারে। তাই অপ্রয়োজনীয় লিংকে প্রবেশ এবং সেই লিংক থেকে কিছু ডাউনলোড করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • এড ব্লকার ব্যবহার করুনঃ- প্রিয় পাঠক আপনার ব্রাউজারে যদি অতিরিক্ত এড শো করে তাহলে এড ব্লকার ব্যবহার করুন। ক্রোম ব্রাউজারে এড ব্লক করার জন্য বিভিন্ন ধরনের এক্সটেনশন পাওয়া যায়। এগুলি ব্যবহারের মাধ্যমে অতি সহজে এড ব্লক করতে পারবেন। এছাড়াও ব্রেভ ব্রাউজার বিভিন্ন ধরণের ক্ষতিকর এডস থেকে আপনাকে রক্ষা করবে। তাই ক্রোম ব্রাউজারের বিকল্প হিসেবে ব্রেভ ব্রাউজার ব্যবহার করে পারেন।
  • ক্ষতিকর সফটওয়্যার আনইন্সটল করাঃ- প্রিয় পাঠক, আপনারা যারা বিভিন্ন ক্ষতিকর সফটওয়্যার ব্যবহার করছেন তারা তা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। প্রয়োজনে এসব সফটওয়্যারগুলিকে আনইন্সটল দিয়ে দিন। এটাই কম্পিউটার ভাইরাস প্রতিরোধের উপায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

  • খারাপ অ্যাড দেখা থেকে বিরত থাকুনঃ- অনেক সময় কম্পিউটার বা স্মার্টফোন ব্রাউজিং করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন খারাপ এড চলে আসে। এসব এ্যাড লিংকে ক্লিক করুন বা বিভিন্ন সাইটে প্রবেশ করার সাজেশন দিয়ে থাকে। এই ধরনে খারাপ এ্যাড দেখা থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • খারাপ ভিডিও দেখাঃ- প্রিয় পাঠক, আপনাদের অনেকে খারাপ ভিডিও দেখে। বিভিন্ন খারাপ সাইটে প্রবেশ করে এই ধরনের ভিডিওগুলি সংগ্রহ করে। এসব সাইটে অনেক ক্ষতিকর ভাইরাস থাকে যা এক নিমিষে আপনার কম্পিউটার, ল্যাপটপ কিংবা স্মার্টফোনকে বিকল করে দিতে পারে। তাই এই ধরণের খারাপ ভিডিও দেখা থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • আপডেট থাকুনঃ- প্রতিনিয়তই নতুন নতুন প্রযুক্তির আবিষ্কার হয়। তথ্য ও প্রযুক্তির যুগে টিকে থাকতে হলে এসব নতুন নতুন প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। ল্যাপটপ, কম্পিউটারকে নতুন প্রযুক্তির সাথে মিলিয়ে নিতে হবে। এন্টিভাইরাস ব্যবহার করার ক্ষেত্রেও আপডেট ও ভালো এন্টিভাইরাস ব্যবহার করতে হবে। তাহলে আপনার কম্পিউটার ভাইরাস প্রতিরোধের উপায় গুলি সফল হবে।
কম্পিউটার ভাইরাস প্রতিকার করার উপায়

প্রিয় পাঠক, আপনার কম্পিউটারটি যদি অলরেডি ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয়ে থাকে তাহলে চিন্তার কোন কারন নেই। আপনি অতি সহজে এই ভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে পারবেন। কম্পিউটার ভাইরাস প্রতিকার করার উপায় হিসবে আনাকে ২টি টিপস অবলম্বণ করতে হবে।

১। ভাইরাস মুছে ফেলাঃ আপনার কম্পিউটার যে ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয়েছে, তার থেকে অধিক শক্তিশালী এন্টিভাইরাস দ্বারা ভাইরাসের সমস্ত প্রোগ্রামকে মুছে ফেলতে হবে। এর ফলে অতি সহজেই কম্পিউটারটি ভাইরাস মুক্ত হয়ে যাবে।

২। অপারেটিং সিস্টেমের রিইন্সটলেশনঃ অনেক সময় শক্তিশালী এন্টিভাইরাসের পক্ষে ক্ষতিকর ভাইরাসগুলি সম্পূর্ণ মুছে ফেলা যায় না। কিছু ভাইরাস থেকেই যায়। এই ভাইরাসগুলি পুনরায় কম্পিউটারকে সংক্রমণ করে। এই অবস্থায় অপারেটিং সিস্টেমের রিইন্সটলেশন করতে হবে। রিইন্সটলেশন প্রক্রিয়ার উত্তম ফলাফল পেতে হার্ড ড্রাইভ সম্পুর্ণভাবে ডিলিট করতে হবে।

পরিশেষে,

আশা করি, আমাদের এই আর্টিকেল থেকে আপনারা কম্পিউটার ভাইরাস কি, এর লক্ষণ, প্রতিরোধ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেয়েছেন। কম্পিউটারকে ভাইরাসের হাত থেকে মুক্ত রাখতে এন্টি ভাইরাসের বিকল্প নেই। তাই দীর্ঘ সময় কম্পিউটার ব্যবহার ও ডাটা সিকিউর রাখার জন্য এন্টি ভাইরাসের ইন্সটল দিয়ে রাখতে হবে। এছাড়াও তথ্য প্রযুক্তির সাথে নিজেকে আপডেট রাখতে হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button