ইন্ডাকশন চুলার দাম– ইন্ডাকশন চুলার বিদ্যুৎ খরচ

প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের ইন্ডাকশন চুলার দাম সম্পর্কে জানাবো। সেই সাথে ইন্ডাকশন চুলা ব্যবহারে বিদ্যুৎ খরচ, চুলার পাতিলের দাম ও কারেন্টের চুলা ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
ইন্ডাকশন চুলা কি? কিয়াম, মিয়াকো, ওয়ালটন ও ভিশন ইন্ডাকশন চুলার দাম এবং বিদ্যুৎ খরচ কত হবে? আমি এই বিষয়গুলি বিস্তারিত আলোচনার চেষ্টা করেছি। এছাড়াও আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে আপনার মতামত বা প্রশ্ন কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করুন আমি আপনার প্রতিটি প্রশ্নের উওর দেওয়ার চেষ্টা করব।
ইন্ডাকশন চুলা কি
মাটির চুলা বা গ্যাসের চুলা ছাড়াও আপনারা হয়তো আরও এক ধরনের চুলার সাথে পরিচিত আছেন। যা আপনাদের কাছে ইন্ডাকশন চুলা বা ইলেকট্রিক চুলা নামে পরিচিত। বর্তমান সময়ে এই ধরনের চুলার ব্যবহার বেড়েই চলছে। কিন্তু আমাদের অনেকে জানেনই না ইন্ডাকশন চুলা কি? আসলে ইন্ডাকশন চুলা ইলেকট্রিক ম্যাগনেট্রিক ফিল্ড ব্যবহার করে পাতিলকে উত্তপ করে রান্না সম্পন্ন করে থাকে।
সহজ ভাষায়, ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড ব্যবহার করে পাতিলে থাকা খাবারকে রান্নায় সাহায্যকারী চুলাকেই মূলত ইন্ডাকশন চুলা বলা হয়ে থাকে। এই চুলাটা নিজে উত্তপ্ত হয় না শুধুমাত্র পাতিলকে উত্তপ্ত করে পাতিলে থাকা খাবারকে রান্না করে দেয়।
ইন্ডাকশন চুলার দাম
বাংলাদেশে দেশি বিদেশি অনেক ইলেকট্রনিক্স পন্যের কোম্পানি রয়েছে। প্রতিটি কোম্পানির পন্যগুলির আলাদা ফিচার এবং আলাদা দাম রয়েছে। সুপ্রিয় পাঠক আপনি যদি ইন্ডাকশন চুলার দাম জানতে চান তাহলে সর্বপ্রথম আপাকে কোম্পানি বাছাই করতে হবে।
কেননা কিয়াম, মিয়াকো, ওয়াল্টন এবং ভিশন কোম্পানিগুলির ইন্ডাকশন কুকারের দাম ও মডেল সম্পূর্ণ আলাদা। তাই আজকের এই আর্টিকেলটিতে প্রতিটি আলাদা আলাদা কোম্পানির ইন্ডাকশন চুলার মডেল ও দাম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি।

কিয়াম ইন্ডাকশন চুলার দাম
বর্তমান সময়ে কিয়াম ইন্ডাকশন চুলার ব্যবহার সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যায়। ঢাকা শহরে গ্যাসের সমস্যা থাকায় প্রায় বাড়িতেই ইন্ডাকশন চুলা রয়েছে। অধিক টেকসই এবং কম বিদ্যুৎ খরচ হওয়ায় কিয়াম ইন্ডাকশন চুলা পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে।
কিয়াম ইন্ডাকশন চুলার দাম এর মডেল এবং সাইজের উপর নির্ভর করবে। প্রিয় পাঠক আপনি যদি সাইজে একটু বড় সাইজের চুলা ক্রয় করেন তাহলে এর দাম একটু বেশি পড়বে। সাধারনত বাসা বাড়িতে মিডিয়াম সাইজের চুলার ব্যবহার সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যায়। তাই আজকে আমি কিয়ামের এই KIAM 9010 চুলার দাম ও সংক্ষিপ্ত বিবরন তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
কিময়ামের KIAM 9010 এই মডেলের চুলার বিভিন্ন কালার রয়েছে। তাই আপনি আপনার পছন্দের কালার বেছে নিতে পারবেন। এই চুলাটি উচ্চ তাপ ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন, বড় কুন্ডলিযুক্ত কয়েল থাকায় খুব দ্রুত রান্না সম্পন্ন হয়। ৪টি পর্যায়ে পাওয়ার সেটিং থাকায় আপনি আপনার পছন্দের পাওয়ার রেঞ্জে রান্না করতে পারবেন। দ্রুত রান্না করার জন্য হাই পাওয়ার এবং মিডিয়াম আচে রান্না করার জন্য মিডিয়াম পাওয়ার ব্যবহার করার সুবিধা রয়েছে।

এছাড়াও অটো শাট অফ সিস্টেম থাকায় ওভার হিট থেকে সুরক্ষা প্রদান করবে। তাই যে কোন রান্নার ক্ষেত্রে আপনার চিন্তার কোন কারন নেই। এলএডি ডিসপ্লে থাকায় পরিষ্কার করার পর আপনার কুকারটি নতুনের মত দেখাবে। এছাড়াও বাসা বাড়ির বিদ্যুৎ ভোল্টেজের সাথে মানানসই হওয়ায় সহজেই ব্যবহার করা যাবে।
সার্বিক দিক বিবেচনা করলে কিয়াম ইন্ডাকশন চুলা অনেক ভাল। প্রিয় পাঠক আপনি যদি আপনার বাসার জন্য ইন্ডাকশন চুলা কেনার প্ল্যান করে থাকেন তাহলে এই চুলাটি নিতে পারেন। আপনি যদি KIAM 9010 এই মডেলের চুলা ক্রয় করেন তাহলে 3000 থেকে 3,299 টাকার মত খরচ হবে।
মিয়াকো ইন্ডাকশন চুলার দাম
মিয়াকো ব্রান্ড মানেই আস্তার একটি জায়গা। আপনাদের অনেকে মিয়াকো ইন্ডাকশন চুলার দাম সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। এই ব্র্যান্ডের চুলার দাম জনার পূর্বে এর কিছু সাধারন বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। এই চুলাতে ইনভার্টার টেকনোলজি থাকায় বিদ্যুৎ খরচ কম লাগে। ২০২৩ সালের শুরুর দিকে নতুন দুটি মডেল বাজারে ভালই জায়গা দখল করে নিয়েছে।
বাজারে যে সব চুলা পাওয়া যায় তার বেশির ভাগই টেম্পারড গ্লাসের। কিন্তু মিয়াকো ইন্ডাকশন চুলার বিশেষত্ব হচ্ছে মার্বেল ভিট্টু প্লেট গ্লাস দিয়ে তৈরি। সর্বাধিক ব্যবহৃত এবং ল্যাটেস্ট মডেল দুটি হল TC-MARBEL E01 এবং TC-MARBEL E02। এই চুলাগুলির দুইটি কালার রয়েছে। তাই আপনি আপনার পছন্দের কালারের চুলা ক্রয় করতে পারবেন।

আপনি ৮০০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড বা এর থেকে কম তাপমাত্রায় খাবার রান্না করতে পারবেন। এছাড়াও কোন প্রকার ধোয়া হয় না এবং ৪ ডিজিটের ডিসপ্লে থাকায় এর একাধিক সুবিধা রয়েছে।
মিয়াকো ইন্ডাকশন চুলার দাম কিয়াম ইন্ডাকশন চুলার থেকে তুলানামূলক একটু বেশি। যেহেতু দুইটি মডেল সম্পূর্ণ আলাদা তাই দামের একটু ভিন্নতা রয়েছে। এক্ষেত্রে TC-MARBEL E01 এবং TC-MARBEL E02 দাম যথাক্রমে 4,150 এবং 4,024 টাকা। আপনি আপানার পছন্দ অনুযায়ী কিনতে পারেন। তবে এদের ইন্টার্নাল ফানশনালিটি প্রায় একই।
ওয়ালটন ইন্ডাকশন চুলার দাম
দেশিয় কোম্পানি হিসেবে ওয়ালটন পন্যের চাহিদা অনেক বেশি। ওয়ালটন দেশিয় কোম্পানি হওয়ায় ক্রেতাদের বিশেষ ধরনের সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকে। এছাড়াও এই কোম্পানির শোরুমগুলি হাতের কাছেই পেয়ে যাবেন। আপনি চাইলে কিস্তি কিংবা নগদ টাকা দিয়ে যে কোন পন্য কিনতে পারবেন।
ওয়ালটনের অন্যান্য পণ্যের ন্যায় ইন্ডাকশন চুলার চাহিদা প্রচুর। বর্তমান বাজারে ওয়ালটনের একাধিক মডেলের ইন্ডাকশন চুলা রয়েছে। মডেলের উপর ভিত্তি করে এর দামের ভিন্নতা রয়েছে। তাই ওয়ালটন ইন্ডাকশন চুলার দাম আপনি কোন মডেলের চুলা কিনবেন এর উপর অনেকটাই নির্ভর করবে।

আপনি যদি এই WI-S40 মডেলের চুলা পছন্দ করেন তাহলে এর দাম হবে 3,950 থেকে 3,555 টাকা। আর যদি এই WI-F15 (Induction Cooker) চুলা পছন্দ করেন তাহলে 4,590 টাকার মত দাম পড়বে। এই মডেলগুলি ছাড়াও আরো কিছু মডেল রয়েছে। যেমনঃ WI-S35 এর দাম 3,900 থেকে 3,510 টাকা এবং WI-S45 এই মডেলের দাম 4,350 টাকা। এছাড়াও এই https://rb.gy/omrriv লিংকের মাধ্যমে আপনি ঘরে বসেই ওয়ালটন ইন্ডাকশন চুলার দাম জানতে পারবেন।
ইন্ডাকশন চুলাগুলি সর্বনিন্ম ১২০ ওয়াট এবং সর্বোচ্চ ১৮০০ ওয়াট পর্যন্ত তাপ উৎপন্ন করতে পারে। আপনি যে মডেলের চুলা ক্রয় করেন না কেন, সবগুলি চুলাতে ১ বছরের ওয়ারেন্টি এবং ৬ মাসের রিপ্লেসমেন্ট সুবিধা পাবেন।
ভিশন ইন্ডাকশন চুলার দাম
দিন দিন ভিশন কোম্পানির ইলেকট্রিক পন্যগুলির চাহিদা বেড়েই চলছে। তাই বাজারের অন্যান্য কোম্পানিগুলির সাথে তাল মিলিয়ে ইন্ডাকশন চুলাও তৈরি করছে। সুপ্রিয় পাঠক আপনি চাইলে ভিশন কোম্পানির ইন্ডাকশন চুলা ক্রয় করতে পারবেন। অন্যান্য কোম্পানির থেকে ভিশন ইন্ডাকশন চুলার দাম তুলনামূলক কিছুটা কম।
ভিশন ইন্ডাকশন চুলাতে টাচ সেন্সরযুক্ত ৪ ডিজিটের পাওয়ার কন্টোল সিস্টেম রয়েছে। এর মাধ্যমে আপনি অতি সহজেই পাওয়ার কন্টোল করতে পারবেন। ভিশন ইন্ডাকশন কুকারে সিরামিক টেম্পারেড গ্লাস ব্যবহার করা হয়েছে। যা শুধুমাত্র পাতিলকে গরম করবে। এর ফলে সম্পূর্ণ তাপ রান্না কাজে ব্যবহৃত হবে। এসব ফিচার দেখে আপনার ভিশন ইন্ডাকশন কুকার পছন্দ হবে।

এখন আমরা ভিশন ইন্ডাকশন চুলার দাম গুলি সম্পর্কে জেনে নিব। প্রিয় পাঠক আপনি যদি এই VSN-1206 মডেলের ইন্ডাকশন চুলার কিনেন তাহলে এর 2,975 টাকার মত। আর যদি এই VSN-XI-211 মডেলের কুকার কিনের তাহলে 3,485 টাকার মত লাগবে।
ইন্ডাকশন চুলার পাতিলের দাম
যে সব হাড়ি পাতিল চুম্বক পদার্থ দ্বারা আর্কষিত হয় সে সব জিনিসই ইন্ডাকশন চুলায় কাজ করবে। যে সব হাড়ি পাতিল অ্যালুমিনিয়াম অথবা তামা দিয়ে তৈরি সে সব হাড়ি পাতিল ইন্ডাকশন কুকারে কাজ করবে না। তাই ইন্ডাকশন চুলার পাতিল আলাদা। আপনি যদি ইন্ডাকশন চুলা ক্রয় করেন তাহলে এর সাথে কিছু হাড়ি পাতিল কিনে নিতে হবে। ইন্ডাকশন চুলার পাতিলের দাম দাম খুব একটা বেশি না। একবার ক্রয় করলে দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যাবে।

ইন্ডাকশন চুলার বিদ্যুৎ খরচ
প্রিয় পাঠক ইন্ডাকশন চুলার বিদ্যুৎ খরচ সম্পূর্ণ নির্ভর করবে আপনার ব্যবহারের উপর। আপনি যদি বেশি সময় ব্যবহার করেন তাহলে বেশি বিল আসবে আর অল্প কিছু রান্না করেন তাহলে খুব কম বিল আসবে।
সাধারনত ইন্ডাকশন চুলাগুলি ১০০০ থেকে ২৪০০ ওয়াটের মধ্যে হয়ে থাকে। তাই আপনি যদি ১০০০ ওয়াটের কোন জিনিস ১ ঘণ্টা ধরে রান্না করেন তাহলে ১ ইউনিট বিদ্যুৎ বিল আসবে। আর আপনি যদি প্রতিদিন ৩ ঘণ্টা করে রান্না করেন তাহলে মাসে ৪৫০টাকার মত বিদ্যুৎ বিল আসবে।
পরিশেষে,
আপনাদের যারা শহরে প্রায়ই গ্যাসের সমস্যায় ভোগেন তাদের জন্য ইন্ডাকশন চুলা আশির্বাদ স্বরুপ। গ্যাস ছাড়া রান্নার কাজকে সহজ করার জন্য ইন্ডাকশন চুলার বিকল্প নেই। ইন্ডাকশন চুলার দাম ও বিদ্যুৎ খরচ কম হওয়ায় কোন প্রকার জামেলা ছাড়াই ব্যবহার করা যায়। ইন্ডাকশন চুলা ক্রয় করার ক্ষেত্রে ব্যান্ড, ওয়ারেন্টি এবং সার্ভিস সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়ার পরামর্শ রইল।