ইতালি ভিসা খরচ 2023, বেতন ও ইতালি ভিসা প্রসেসিং

ইতালি হচ্ছে পশ্চিম ইউরোপের শেনঝেন ভুক্ত শিল্প উন্নত দেশ। শেনঝেন ভুক্ত দেশ হওয়ায় বাংলাদেশ থেকে প্রতিনিয়ত প্রচুর লোক যাচ্ছে। কিন্তু ইতালি ভিসা খরচ সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকার কারনে অনেকে জামেলায় পড়ছে।
অনেকে ভ্রমণের জন্য ইতালি যায়। আবার কেউ কেউ স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে ইতালি যায়। ভ্রমণ, পড়াশোনা কিংবা কাজ আপনি যে কোন ধরনের ভিসায় যান না কেন ভিসা খরচ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারনা রাখতে হবে।
তাই আজকের আর্টিকেলটিতে মূলত ইতালি কাজের ভিসা বা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা খরচ, বেতন ও ভিসা প্রসেসিং সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। ইতালি ভিসা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য পেতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি ধৈর্য্যসহকারে পড়ুন।
ইতালি ভিসার ধরন
আপনারা যারা ইটালিতে ওয়ার্ক পারমিট কিংবা টুরিস্ট ভিসায় যাওয়ার জন্য মনস্থির করছেন তাদেরকে সর্বপ্রথম ইতালি ভিসার ধরন সম্পর্কে জানতে হবে। কেননা ইতালি ভিসা খরচ ভিসার ধরণের উপর নির্ভর করবে। আপনি ইতালিতে দুই ধরনের ভিসায় যেতে পারবেন। যেমনঃ সিজনাল ভিসা ও নন সিজনাল ভিসা।
সিজনাল ও নন সিজিনাল ভিসা ছাড়াও ইতালি যাওয়ার জন্য অন্য একটি ভিসা চালু রয়েছে। এই ভিসাকে অনেকে স্পন্সর ভিসা হিসেবে চিনে থাকেন। আমাদের অনেকের ইতালির ভিসার ধরন সম্পর্কে ক্লিয়ার ধারনা না থাকায় এর খরচ কম বেশি মনে হতে পারে । চলুন তাহলে ইতালি ভিসা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা নেওয়া যাক।
সিজনাল ভিসাঃ ইতালিতে শিল্প, কৃষি, নির্মাণখাত, সড়ক ও যোগাযোগ এবং হোটেল-রেস্তোরাঁর কাজে বিপুল সংখ্যক লোকের প্রয়োজন হয়। এই সময় কৃষি বা শিল্প খাতে ব্যবসা বানিজ্য করছেন এসব মালিকেরা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য চুক্তিতে দক্ষ জনবল নিয়োগ দিয়ে থাকেন।
আপনি যদি সিজনাল ভিসা নিয়ে যেতে চান তাহলে ইতালি ভিসা খরচ অনেকটা কম লাগবে। আপনার মালিক যদি আপনার কাজ দেখে পছন্দ করে তাহলে স্থায়ীভাবে রেখে দিতে পারে। আর যদি আপনার কাজ পছন্দ না হয় তাহলে ৬ থেকে ৯ মাসের মধ্যে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দিবে। এই ধরনের ভিসাকে মূলত সিজনাল ভিসা বলা হয়ে থাকে।
নন সিজিনাল ভিসাঃ আমাদের দেশ থেকে বেশির ভাগ লোক নন সিজিনাল ভিসা নিয়ে ইতালিতে যায়। যে কোন দেশে ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় যেতে হলে নন সিজিনাল ভিসা নিয়েই যাওয়া উচিত। এক্ষেত্রে ইতালি ভিসা খরচ একটু বেশি পড়বে। নন সিজিনাল ভিসাগুলি আপনাকে লাইফটাইম সাপোর্ট দিবে। আপনি নন সিজিনা ভিসার মাধ্যমে অনেক বেশি সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। তবে নন সিজনালে ওয়ার্কার, স্টার্ট আপ বা উদ্যোক্তা ভিসায় হিসেবে যাওয়াই উত্তম হবে।
এছাড়াও ইতালি যাওয়ার জন্য একধরনের ভিসা সেবা প্রচলিত আছে তা হচ্ছে স্পন্সর ভিসা। আপনার কোন আত্মীয় স্বজন যদি ইতালিতে থাকে তারা আপনাকে স্পন্সর হিসেবে ইতালি যাওয়ার সুযোগ করে দিতে পারে। বর্তমান সময়ে অনেক প্রচলিত ভিসা। তাই আপনার যদি কোন আত্মীয় স্বজন ইতালিতে থেকে থাকে তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। স্পন্সর এর মাধ্যমে ইতালিত ভিসা খরচ অনেকটাই কম লাগবে।
ইতালি ভিসা খরচ
পূর্বে আমারা ইতালি ভিসার ধরন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আপনাদের যেমন বলেছি ইতালি ভিসা খরচ নির্ভর করে ভিসার ধরন অনুযায়ী। আপনি যদি ইতালিতে সিজিনাল ভিসা নিয়ে যেতে চান তাহলে খরচ অনেক কম লাগবে। সাধারণত ইতালিতে সিজিনাল ভিসায় যেতে ৩ থেকে ৪ লক্ষ টাকার মত লাগে। আবার অনেক সময় এর থেকে বেশি টাকাও লাগতে পারে।

অন্যদিকে নন সিজিনাল ভিসায় ইতালি যেতে হলে অনেক মোটা অংকের টাকা গুণতে হবে। এই টাকার পরিমাণ হতে পারে সিজিনাল ভিসার ২ থেকে ৩ গুণ। তবে নন সিজিনাল ভিসার সুযোগ সুবিধা অনেক বেশি। নন সিজিনাল ইতালি ভিসা খরচ বেশি হলেও সবাই এই ভিসা নিয়েই যেতে চায়। নন সিজনালা ভিসার ক্ষেত্রে ইতালি যাওয়ার জন্য ৯ থেকে ১০ লক্ষ টাকার মত লাগবে।
ইতালি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা
দীর্ঘ করোনার মহামারীর পর গত বছর থেকে ইতালি ভিসা পুনরায় চালু হয়েছে। বাংলাদেশ ও ইতালি প্রবাসী মান্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সেখানে বলা হয়েছে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর দক্ষ শ্রমিকদের ইতালি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা দিবে। এর ফলে বিভিন্ন খাত যেমনঃ শিল্প, কৃষি, নির্মাণখাত, সড়ক ও যোগাযোগ এবং হোটেল-রেস্তোরাঁয় ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে ইতালি যেতে পারবে।
অনেক শ্রমিক বৈধ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে দেশটিতে কর্মরত রয়েছেন। সরকারি বেসরকারিভাবে অনেক লোক ইতালি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে পাড়ি জমায়। সরকারিভাবে ইতালি যেতে হলে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। কেননা সরকারি কার্যক্রমগুলি অনেক লেন্থি প্রসেস হয়ে থাকে। আর যদি বেসরকারিভাবে ইতালি যেতে চান তাহলে অল্প কয়েক দিনের মধ্যে ভিসা পেয়ে যাবেন।
সরকারিভাবে ইতালি যেতে পারলে বেশি সুযোগ সুবিধা লাভ করা যায়। সাধারণত সরকারকারি সহযোগিতায় ইতালি ভিসা খরচ ২ থেকে ৩ লক্ষ টাকার মত লাগবে। অন্যদিকে বেসরকারি এজেন্সি থেকে ইতালি যেতে ৯ থেকে ১০ লক্ষ টাকার মত লাগতে পারবে।
ইতালি সর্বনিম্ন বেতন কত
অন্যান্য দেশের তুলনায় ইতালি যেতে খরচ একটু বেশিই পড়ে। তাই ইতালি যাওয়ার পূর্বে যে প্রশ্নটি সব সময় ঘোরপাক খায় তা হল ইতালি সর্বনিম্ন বেতন কত। যেহেতু ইতালি যেতে ভিসা খরচ অন্যান্য দেশের থেকে বেশি টাকা লাগে সেক্ষেত্রে বেতনের পরিমাণটাও একটু বেশি হবে এটাই স্বাভাবিক।
আপনি যদি ইতালিতে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে যান তাহলে আপনার সর্বনিম্ন বেতন হবে ৮০ হাজার টাকার মত। অন্যান্য দেশ যেমন মালয়েশিয়া, কাতার ও সৌদি আরব সর্ববিম্ন বেতন ৪৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকার মত হয়ে থাকে। যেখানে ইতালির সর্বনিম্ন বেতন ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা বেশি।

আপনি চাইলে এর থেকে বেশি বেতন পেতে পারেন। এটা অনেকটা নির্ভর করবে আপনার কাজের দক্ষতার উপর। আপনি যে সেক্টরে কাজ করবেন সেই সেক্টরে যদি অধিক দক্ষতা ও জ্ঞান থাকে তাহলে আপানার বেতন কয়েক গুণ বেশি হবে। তাই ইতালি যাওয়ার পূর্বে যে কোন একটি সেক্টরে নিজেকে দক্ষ শ্রমিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করার মন মানসিকতা তৈরি করতে হবে। অতিরিক্ত ওভারটাইম আপনার ইতালি সর্বনিম্ন বেত কত হবে নির্ণায়ক হিসেবে কাজ করবে।
ইতালি ভিসা প্রসেসিং
ইতালিতে সিজেনাল কিংবা নন সিজেনাল ভিসায় যাওয়ার পূর্বে অব্যশই ইতালি ভিসা প্রসেসিং করে নিতে হবে। ইত্যালি ভিসা আবেদন করার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস রেডি করে রাখতে হবে। এই দেশটির ওয়ার্ক পারমিট ভিসার মেয়াদ সবোর্চ্চ ৩ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়ে থাকে। তাই ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ে যাওয়ার পূর্বে মেয়াদ বাড়িয়ে নিতে হবে। আপনি যদি সঠিক সময়ে ভিসার মেয়াদ বাড়াতে ব্যর্থ হন তাহলে অবৈধভাবে কাজ করতে হবে।
সরকারি বা বেসরকারি যে কোন একটি প্রসেসে আপনাকে অগ্রসর হতে হবে। আপনি যদি বেসরকারি ভিসা এজেন্সির মাধ্যমে ইতালি ভিসা আবেদন করেন, তাহলে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়ার ১ থেকে ২ মাসের মধ্যে আপনার ভিসা প্রসেসিং কমপ্লিট হয়ে যাবে। আর যদি সরকারিভাবে ভিসা প্রসেসিং করেন তাহলে একটু সময় লাগতে পারে।
ইতালি ভিসা খরচ

বাংলাদেশ থেকে ইতালি যাওয়ার সহজ উপায়
সিজনাল ভিসায় ইতালি যেতে হলে আপনাকে কয়েকটি প্রসেস অবলম্বন করতে হবে। প্রথমে ইতালির বিভিন্ন কোম্পানিগুলি তাদের প্রবাসী কল্যাণ দপ্তরে শ্রমিক নেওয়ার জন্য আবেদন করে। এরপর ঐ দেশের প্রবাসী মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশের প্রবসী মন্ত্রণালয়ে তাদের দেশে লোক নিয়োগের বিষয়টা অবহিত করে থাকে। এখন প্রশ্ন হল বাংলাদেশ থেকে ইতালি যাওয়ার সহজ উপায় কি?
বাংলাদেশ থেকে সহজে ইতালি যাওয়ার জন্য আপনার যদি কোন পরিচিত লোক বা আত্মীয় স্বজন ইতালি অলরেডি থেকে থাকে। তাহলে তাদের মাধ্যমে সিজেনাল ভিসার জন্য কোম্পানির মালিক দিয়ে ইতালি ভিসা আবেদন করিয়ে নিতে হবে। এর ফলে আপনি সরাসরি কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করে ইতালি চলে যেতে পারবেন।
আর আপনার যদি কোন নিকট আত্মীয় কিংবা পরিচিত লোক না থাকলে বিশ্বস্ত ভিসা এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন করে নিতে পারবেন। এজেন্সির মাধ্যমে ভিসা আবেদন করার ক্ষেত্রে যাচাই বাচাই করে আবেদন করতে হবে। অনেক সময় ভূয়া এজেন্সির হাতে টাকা দেওয়ার ফলে টাকা ও পাসপোর্ট উভয়ইর ক্ষতি হতে পারে।
ইতালি ভিসা আবেদন করার নিয়ম
বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছরই সিজেনাল, নন সিজেনাল ভিসায় অনেক লোক ইতালি যায়। ইতালি ভিসা আবেদন করার নিয়ম সম্পর্কে সঠিক ধারনা রাখা অত্যন্ত জরুরি। ভিসা আবেদন করার জন্য আপনাকে সর্বপ্রথম আপনি কোন ভিসায় ইতালি যাচ্ছন তা নির্ধারণ করতে হবে। আপনি যদি সিজনাল ভিসায় ইতালি যান তাহলে ঐদেশে আপনার পরিচিত আত্মীয় স্বজনের সাথে যোগাযোগ করে কোম্পানির থেকে আবেদন পাঠাতে হবে।
আর আপনি যদি নন সিজেনাল কিংবা ফ্যামিলি, স্টুডেন্টস ভিসায় ইতালি যেতে চান তাহলে সরকারি বা বেসরকারি এজেন্সির মাধ্যমে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। সরকারি এজেন্সির মাধ্যমে ইতালি ভিসা খরচ অনেক কম লাগে এবং বিশ্বস্ত। অন্যদিকে বেসরকারি এজেন্সির মাধ্যমে টাকার পরিমাণ বেশি লাগলেও কাজ দ্রুত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।
পরিশেষে,
ইতালি ভিসা নিয়ে দেশটি যাওয়ার জন্য ব্যক্তিগতভাবে এবং প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ভিসার আবেদন করা যাবে। সরকার অনুমোদিত এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন প্রকিয়া সম্পূর্ণ করতে ১ থেকে ২ মাসের মত সময় লাগতে পারে। ইতালি ভিসা খরচ একটু বেশিও হলেও দেশটিতে কাজের বেতন অন্যান্য দেশ থেকে অনেক বেশি হয়ে থাকে। তাই ভিসা খরচের চিন্তা না করে এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন করে নিতে পারেন। সরকার অনুমোদিত এজেন্সি গুলিকে যাচাই বাচাই করে ভিসা আবেদন করতে হবে।
ইতালিতে যেতে অনেক টাকা লাগে তাই সিজনাল ভিসায় না যেয়ে নন সিজনাল ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন। নন সিজেনাল ভিসাগুলির সুযোগ সুবিধা অনেক বেশি হয়ে থাকে। ইতালি শেনঝেনভুক্ত দেশ হওয়ায় পরবর্তীতে আপনি আপনার কাজ পরিবর্তন করে নিতে পারবেন।